মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Friday, July 27, 2018

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী: বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ একজন মনীষী

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী

দ্বীনের এক মহান দাঈ, ঐশি জ্ঞান তথা ইলমে ওহীর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী।তিনি ছিলেন রাসূল সঃ এর রক্তের গর্বিত বাহক। 
বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। ভারত উপমহাদেশ পেরিয়ে আরব আজমের মনীষিদের কাতারে তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ঠের একজন মুসলিম মনীষী। দ্বীনের জন্য গভীর দরদ আর ভালবাসায় হৃদয় সিক্ত এই মহান মনীষী তার দাওয়াহ ও গবেষনাধর্মী লেখনীর মাধ্যমে যে কালজয়ী জ্ঞানের ভান্ডার মুসলিম জাতিসত্বার জন্য রেখে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে মানুষকে আলোর পথ দেখাবে। বলা চলে তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দিতে মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের মধ্যে অন্যতম একজন।

আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে। এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ। যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্তীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। আধুনিক বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সভ্য পৃথিবী গড়ার পেছনে ইসলামের অবদান। দেখিয়ে দিয়েছেন মুসলিমদের নেতৃত্বের পতনে বিশ্ব সভ্যতার পরিণতি।

বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দুর চেয়ে তার আরবী রচনা অধিকতর অনবদ্য। তিনি তার লিখনীর মাধ্যমে যে ভাবে আত্মভোলা জাতির গর্বিত আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন, পথভোলা জাতিকে পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে উম্মাহ এবং সত্যসন্ধানী মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখাবে। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে মরেও আজ অমর হয়ে আছেন মানুষের হিদায়াতের রাহবর হয়ে। তার লিখে যাওয়া অনবদ্য গ্রন্থগুলো মানুষকে পথের দিশা দিয়ে যাবে চিরকাল।


আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। তিনি আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। 


ওহীর জ্ঞানের এই মহান রাহবর ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, আরবি ১৪২০ হিজরীর রমজান মাসের ২২ তারিখ, শুক্রবার জুমআর পূর্বে সূরা ইয়সীনের ১১ নং আয়াত তিলাওয়াত করা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁকে রায়বেরেলিতেই দাফন করা হয়।


আল্লামা নদভীর পরিচিতি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে তুুুুলে ধরা হলো-

Jump to navigationJump to search
সাইয়্যেদ
আবুল হাসান আলী আল-হাসানী আল-নাদভী
আবুল হাসান আলী আল হাসানী আন নাদভী.jpg
জন্মআবুল হাসান আলী
ডিসেম্বর ৫১৯১৩
রায়বেরেলি, সাহারানপুর, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ (৮৬ বছর)
রায়বেরেলি, সাহারানপুর, ভারত
মৃত্যুর কারণবার্ধক্যজনিত অসুস্থতায়
সমাধি স্থানরায়বেরেলি, সাহারানপুর, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
যুগবিংশ শতাব্দী
অঞ্চলভারত
পেশাশিক্ষকতা, রচনা
মাজহাবহানাফী
আন্দোলনদেওবন্দী
মূল আগ্রহইতিহাস
শিক্ষায়তন লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়
সুফি তরিকাচিশতিয়া, কাদেরিয়া
পুরষ্কার সুলতান ব্রুনাই পুরস্কার
ওয়েবসাইটhttp://abulhasanalinadwi.org
আবুল হাসান আলী আল হাসানী আন নাদভী (উর্দু: سیّد ابوالحسن علی حسنی ندوی) (ডিসেম্বর ৫, ১৯১৩ - ডিসেম্বর ৩১, ১৯৯৯)[২] তিনি বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, লেখক এবং পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি বিভিন্ন ভাষায় ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি "আলী মিয়াঁ" নামেও পরিচিত।

জন্ম ও শৈশবকাল:

তিনি ১৯১৩ খ্রীস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর ভারতের রায়বেরেলি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আবদুল হাই এবং মাতার নাম খায়রুন্নেসা। তারঁ পিতা-মাতা উভয়েই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতি হাসান রাযিআল্লাহু আনহুর বংশধর ছিলেন। ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দে মাত্র ১০ বছরেরও কম বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। এমতাবস্থায় বড় ভাই মাওলানা আব্দুল আলী আল হাসানী এবং মা খাইরুন নিসা তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শৈশবে মায়ের কাছেই আলী মিয়াঁ কোরআন, আরবিউর্দূ ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। আলী মিয়াঁ ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দে শায়খ খলীল বিন মুহাম্মদ আল আনসারীর কাছে আরবি ভাষা শেখা শুরু করেন এবং এই ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি তাঁর দুই চাচা শায়খ আযীযুর রহমান এবং শায়খ মুহাম্মদ তালহার কাছেও আরবি ভাষা ও সাহিত্য পড়েন।পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে নদওয়াতুল উলামাতে ড: তাকীউদ্দীন হেলালীর কাছে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা সমাপন করেন। ১৯২৬ সনে তিনি কানপুরের নদওয়াতুল উলামাতে ভর্তি হন। এ সময়ে আরবি ভাষায় পারদর্শিতার কারণে তিনি সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেন। এবং আরবদেশ থেকে আগত মেহমানদের সাথে দোভাষী হিসেবে তিনি বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন। ১৯২৭ সালে তিনি লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উর্দূ ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।১৯২৮সাল থেকে ১৯৩০সাল পর্যন্ত তিনি ইংরেজি ভাষা অধ্যয়ন করেন। যা ইসলাম সম্পর্কে লিখিত ইংরেজি বই থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহে তাঁর সহায়ক হয়।১৯২৯সালে তিনি আবার নদওয়াতুল উলামায় ভির্তি হন এবং তিনি একনিষ্ঠভাবে আল্লামা মুহাদ্দিস হায়দার হোসেন খানের দরসে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর কাছেই সাহীহায়ন,সুনানে আবু দাউদ এবং তিরমীজী শরীফ সমাপ্ত করেন। তার কাছে আলী মিয়াঁ তাফসীরে বায়জাভীরও কিছু অংশ পড়েন। আলী মিয়াঁ তার শিক্ষক খলীল বিন মুহাম্মদের কাছেই নির্বাচিত কিছু সূরার তাফসীর পড়েন। এছাড়া আব্দুল হাই আল ফারুকীর কাছেও তিনি কোরআনের কিছু অংশের তাফসীর পড়েন। তবে মাদ্রাসার সুনির্দিষ্ট পাঠ্যসূচী অণুযায়ী তিনি সম্পূর্ণ কোরআনের তাফসীর অধ্যয়ন করেন ১৯৩২ সালে লাহোরে আল্লামা মুফাসসির আহমাদ আলী লাহোরীর কাছে। এ বছরই তিনি দেওবন্দে শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমাদ মাদানীর কাছে কয়েক মাস থাকেন এবং তার সহীহ বুখারী ও সুনানে তিরমীজীর দরসে উপস্থিত থাকেন। আলী মিয়াঁ তার কাছে উলুমুল কোরআন এবং তাফসীরও পড়েন। এছাড়া আলী মিয়াঁ শায়খ ইজাজ আলীর কাছে ফিকহ এবং ক্বারী আসগর আলীর কাছে তাজবীদ শেখেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী:

১৯৩৪ সালে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তাফসীর, হাদীস, যুক্তিবিদ্যা, আরবি সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষা দেন। ১৯৩৪সালে তিনি বিয়ে করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন। এই সফরের মাঝেই তিনি মাওলানা শায়খ আবদুল কাদির রায়পুরী এবং বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক মাওলানা মুহাম্মাদ ইলয়াস কান্ধলভীর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে নিজের কর্মজীবনের পরামর্শদাতারূপে গ্রহণ করেন। প্রথমোক্ত ব্যক্তির কাছে তিনি তাযকিয়াহ তথা আত্মশুদ্ধি বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ করতেন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে তিনি ধর্মপ্রচার ও সমাজ-সংস্কার বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ করতেন। সারা জীবন তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। শেষ জীবন পর্যন্ত তিনি ভারত ও পৃথিবীর অনেক দেশে সফর করেন। ১৯৪৩ সালে দীনী শিক্ষার জন্য তিনি “আন্জুমানে তা’লীমাতে দীন” নামক একটি এ্যসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি কোরআন ও হাদিসের ওপর বেশকিছু বক্তৃতা প্রদান করেন, যা আধুনিক শিক্ষিত সমাজে সাড়া ফেলে। ১৯৪৫ সালে তিনি নদওয়াতুল উলামার প্রশাসনিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালে নদওয়াতুল উলামার তৎকালীন শিক্ষা বিভাগের পরিচালক সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভীর অণুরোধে তিনি শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালকের পদ গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে সুলাইমান নদভীর ইন্তেকালের পর তিনি শিক্ষা বিভাগের পরিচালক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে বড়ভাই আব্দুল আলী আল হাসানীর মৃত্যুর পর তিনি নদওয়াতুল উলামার মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালেই তিনি তাঁর বিখ্যাত আন্দোলন “পায়ামে ইনসানিয়্যাত” শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি আরবি পত্রিকা “আল-বাস” এবং ১৯৫৯ সালে “আর-রায়ীদ”এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে আলী মিয়াঁ দামেশকে ‘আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট’এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৯ সালে তিনি লখনৌতে “ইসলামিক গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬২ সালে মক্কায় সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীমের অণুপস্থিতিতে আলী মিয়াঁ “রাবেতাতুল ইসলাম”এর উদ্বোধনী অণুষ্ঠান পরিচালনা করেন। উক্ত অণুষ্ঠানে সৌদি আরবের শাসক সাউদ বিন আবদুল আজীজ, লিবিয়ার শাসক ইদরীস সেনুসীসহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিরেন। এই অণুষ্ঠানেই তিনি “ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ইসলাম” শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালে সৌদী শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ বিভাগের পাঠ্যসূচী প্রণয়নে পরামর্শ দেয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৮০ সালে জর্দান আরবি একাডেমির একজন সদস্য নির্বাচিত হন। এই বছরই তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি "বিশ্ব ইসলামী সাহিত্য সংগঠন"এর মহাপরিচালক নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে এবং ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা:

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী তাঁর রচিত গ্রন্থ মা যা খাসিরাল 'আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন (মুসলামানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?)-এর জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কারের নগদ দুই লাখ রিয়ালের অর্ধেক তিনি আফগান শরণার্থীদের জন্য এবং বাকী অর্ধেক মক্কার দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (একটি হিফজখানা এবং মাদরাসা আল-সাওলতিয়াহ)দান করে দেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সাহিত্যে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ খণ্ডে রচিত উর্দু ইতিহাস গ্রন্থ তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমত (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস)-এর জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। যার মূল্য ছিল বিশ লক্ষাধিক ভারতীয় রুপি। আলী নদভী পুরস্কারের সমস্ত অর্থ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করে দেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। দুবাইয়ের যুবরাজ এবং আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ ইবনে রুশদের হাত থেকে গ্রহণ করা প্রায় এক কোটি পঁচিশ লক্ষ ভারতীয় রুপি সমমূল্যের এ পুরস্কারের পুরোটা তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজে ব্যয় করেন।

রচনাবলী:

১৯৩১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সাইয়্যেদ রশিদ রেজা সম্পাদিত মিসরের আল মানার পত্রিকায় আলী মিয়াঁর সর্বপ্রথম প্রবন্ধ ছাপা হয়। প্রবন্ধের বিষয় ছিল শহীদ আহমাদ বিন ইরফানের কর্ম। ১৯৩৮ সালে উর্দূতে “সীরাতে আহমাদ শহীদ”নামে তাঁর সর্বপ্রথম বই প্রকাশিত হয়। ১৯৪০ সালে তিনি “মুখতারাত মিন আদাবিল আরব” কিতাবটি সংকলন করেন। ১৯৪২-১৯৪৪ সালের মাঝে “ক্বাসাসুন নাবিয়্যীন” এবং “আল ক্বিরাআতুর রাশিদাহ”নামে দু’টি শিশুতোষ সিরিজ লেখেন। ১৯৪৪ সালে তিনি তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো” লেখা শুরু করে ১৯৪৭ সালে শেষ করেন।১৯৫৮ সালে তিনি শায়খ আহমাদ রায়পুরীর অণুরোধে কাদীয়ানীদের সম্পর্কে “কাদীয়ানী ও কাদীয়ানিয়্যাত” নামে একটি বই লেখেন।১৯৬৭ সালে তিনি “আরকানে আরবাআ’হ” এবং ১৯৮৮ সালে আলী রাদিয়াল্লাহুর জীবনী “মুরতাজা” রচনা করেন।তার বেশির ভাগ বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে।

মৃত্যু:

আলী মিয়াঁ ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, আরবি ১৪২০ হিজরীর রমজান মাসের ২২ তারিখ, শুক্রবার জুমআর পূর্বে সূরা ইয়সীনের ১১ নং আয়াত তিলাওয়াত করা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁকে রায়বেরেলিতেই দাফন করা হয়।

No comments:

Post a Comment

Pages