মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Sunday, August 12, 2018

দ্বিতীয় মেয়াদে সিলেটের মেয়র হলেন আরিফুল হক

আবারো বিজয়ী আরিফুল হক
দ্বিতীয় মেয়াদে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি’র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশী পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
নির্বাচনের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর বিজয় সিলেট নগরবাসীকে উৎসর্গ করেছেন। সকল দল-মতের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে তিনি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট নগরীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রথম মেয়াদের যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে তা শেষ করে মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে চান তিনি। 
এদিকে,সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, সিলেট নগরীর যেকোনো প্রয়োজনে তিনি অতীতের ন্যায় সব সময় পাশে থাকবেন। 
গত ৩০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গোলযোগের কারণে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। তবে ওই দুই কেন্দ্র ছাড়াও সিসিকের ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফলে আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা প্রতীকে পান ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। 
গতকাল শনিবার স্থগিত কেন্দ্র দুটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থগিত দুটি কেন্দ্রে আরিফুল হক পান ২ হাজার ৯২ ভোট আর কামরান পান ৫২২ ভোট। সব মিলিয়ে ১৩৪ কেন্দ্রের ফলাফলে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৯২ হাজার ৫৮৮। আর বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। সেই হিসেবে ৬ হাজার ১৯৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আরিফ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেসরকারিভাবে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ সময় আরিফুল হক বিগত ৬১ দিনের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সরকারের সকল বিভাগের প্রতিনিধি, সহকারী রিটার্নিং অফিসারবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 
এ সময় রিটার্নিং অফিসারের কন্ট্রোল রুমে মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং আরিফুল হক চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 
এদিকে, ভোটগ্রহণ চলাকালে সকালে মেয়র পদের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেন্দ্র দু’টি পরিদর্শন করেছেন। এসময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি নির্বাচনের ফল যা-ই হোক তা মেনে নেবেন বলে জানান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। অন্যদিকে 'ষড়যন্ত্র' না হলে ভোটে তিনিই জিতবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
মেয়র পদে কে কত ভোট পেলেন ॥ সিসিক নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ও বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ দুইজন প্রার্থী ছাড়া অন্য চার প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে-মহানগর জামায়াতের আমীর ও সিলেট নাগরিক ফোরামের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ১১ হাজার, ইসলামী আন্দোলনের ডা: মোয়াজ্জেম হোসেন খান ২,২০৮, সিপিবি-বাসদের প্রার্থী আবু জাফর ৯০৯ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের পেয়েছেন ৩১৪ ভোট। নির্বাচনী কার্যক্রম চলাকালে গত ১৩ জুলাই বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ালেও ভোট গণনায় তিনি ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। 
এক নজরে আরিফুল হক চৌধুরী ॥ আরিফুল হক চৌধুরী ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেট নগরীর কুমারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ শফিকুল হক চৌধুরী এবং মা আমিনা খাতুন। আরিফুল হক বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন সদস্য হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৩ সালে তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি সিটি কর্পোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ৩৫ হাজার ১৫৭ ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় আরিফ পেয়েছিলেন এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট আর কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট।
আরিফের জয়ের নেপথ্যে ॥ সিসিকের মেয়র পদে আরিফুল হকের বিজয়ের নেপথ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। দায়িত্ব পালনের মাত্র ২৩ মাসে নগরীর রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন আরিফ। এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের আরিফের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে বলে কয়েকজন নগরবাসী মনে করেন। নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, বিগত সময়ে মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনের ৫ বছর সময়ের মধ্যে ২৭ মাসই কারাবন্দী ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি নগরের মানুষের সেবা করার সুযোগ পান মাত্র ২৩ মাস। এই সময়ে তিনি নগরীর পাড়া-মহল্লার ছোট-খাটো রাস্তা নির্মাণ সংস্কার করা থেকে শুরু করে ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, ছড়া-খাল উদ্ধার, রাস্তাঘাট সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। 
সিসিক নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগ থেকে সিলেটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে-বিস্ফোরক আইনে এবং দুটি পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দানের অভিযোগে। এ দুটি মামলায় বিএনপির অন্তত দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়। আটক করা হয়-আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাক, তার ছেলে রুম্মান রাজ্জাক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট সাঈদ আহমদ ও আরিফের প্রচার সেলের প্রধান জুরেজ আব্দুল্লাহ গুলজারকে। এরই মধ্যে সাঈদ আহমদ, জুরেজ আব্দুল্লাহ গুলজার ও রুম্মান রাজ্জাক আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক এখনো কারাগারে রয়েছেন। 
সিসিক নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট আরিফের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়। যে কারণে ইসলামপন্থী ভোটও টানতে সক্ষম হন আরিফুল হক চৌধুরী। 
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী দুই বছর দায়িত্ব পালন করেই সিলেট নগরীতে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। এ কারণেই নগরবাসী দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসাবে তাকে পছন্দ করেছে।

সুত্র- সিলেটের ডাক

No comments:

Post a Comment

Pages