মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Friday, September 14, 2018

মুক্তচিন্তা-মুক্তবুদ্ধি এবং ধর্মনিরপেক্ষবাদ

 
বস্তুত: কোন আইনকে স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় করতে হলে তার পেছনে শক্তিশালী যুক্তি প্রয়োজন। কিন্তু কোন ধর্মরিপেক্ষ তথা স্বাধীন বিবেক এমন যুক্তি পেশ করতে অক্ষম। কারণ, আজকের মানুষ কোন একটি আইনকে স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় বলে স্থির করবে; কালকের মানুষ সে আইনকেই স্থায়ী এবং অপরিবর্তনশীল হওয়ার অযোগ্য বলে ঘোষণা করবে। সুতরাং বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি মাত্র পথই হল, মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধিকে প্রবৃত্তির গোলাম না বানিয়ে সেই স্বত্তার গোলাম বানাবে, যিনি তার এবং সমগ্র মহাজগতের স্রষ্টা। যেহেতু তিনি পৃথিবীর আবর্তন-বিবর্তন এবং স্রষ্টা হিসেবে সৃষ্টির সকল বিষয়ে সম্যক অবগত; সেহেতু তিনি ছাড়া আর কেহ বলতে পারবেনা মানুষের জন্য কোন আইন কল্যাণকর এবং অপরিবর্তনীয় এবং কোন আইনটি অকল্যাণকর এবং পরিত্যাজ্য।

--------------------------------------------------
 সেলিম সামীর
--------------------------------------------------
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ বলতে এমন একটি মতবাদকে বুঝায়, যে মতবাদে ধর্মের কোন স্থান নেই। যে মতবাদে জীবনাচরণের যে কোন বিষয়ের সমাধান, যে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত হয় কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়, বরং এমন বিবেক-বুদ্ধি থেকে যা সম্পুর্ণ স্বাধীন। যে বিবেক-বুদ্ধির উপর ঐশ্বরিক জ্ঞান তথা ধর্মের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতাও বলা যায়। আর ধর্মনিরপেক্ষতার আভিধানিক অর্থই হচ্ছে সামাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি তথা জীবনাচরণের সকল বিষয়কে ধর্মের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত রাখা। সুতরাং যে নীতি ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত তাকে ধর্মহীনতা ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে? তেমনিভাবে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির সংজ্ঞাও ধর্মরিপেক্ষতার সংজ্ঞায় পড়ে। কারণ, মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধিও ঐশ্বরিক জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত, স্বাধীন।

প্রশ্ন হল, এই ধর্মনিরপেক্ষ বিবেক তথা মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির দ্বারা আমাদের জীবন পরিচালনা কি সম্ভব? ভাল-মন্দের সুষ্ঠু বিচার এবং নিখুঁত সমাধানে পৌঁছা কি সম্ভব?

মূল আলোচনায় যাবার আগে আমাদের প্রথমেই বুঝা প্রয়োজন যে, ঐশ্বরিক তথা ধর্মীয় জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ বিবেক দিয়ে কোন বিষয়ের ভাল-মন্দের বিচার করার অধিকার বা ক্ষমতা মানুষের কতটুকু রয়েছে? এ বিশ্ব জাহানের পরিচালক মহান স্রষ্টার আঠারো হাজার সৃষ্টির মধ্যে একটি সৃষ্টি হচ্ছে ‘মানুষ’। আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। বাকী সমস্থ সৃষ্টিকে করা হয়েছে এ মানুষের অনুগত। এ অনুগত সৃষ্টিসমুহকে নিয়ে নিজের জীবন পরিচালনার জন্য মানুষকে দেয়া হয়েছে বুদ্ধি-বিবেক। যাতে সে ভাল মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। মানুষ যেহেতু স্রষ্টার সৃষ্টি এবং যেহেতু বিবেক-বুদ্ধি তাকে তিনিই দিয়েছেন, সেহেতু ভাল-মন্দের বিচারে মানুষের বিবেককে প্রয়োগের জন্য তার স্রষ্টার দেয়া কোন মূলনীতি অবশ্যই থাকা প্রয়োজন, কারণ, সৃষ্টি যার বিধানও তার হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। সে মূলনীতি হচ্ছে ‘কুরআন’, যার সম্পর্কে স্রষ্টা বলেন:

“এটা মানুষের হেদায়াতের আলোকবর্তিকা, সত্যানুসন্ধানীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশকারী এবং ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী।”

সেক্যুলার সমাজে বিবেক-বুদ্ধির উপর সিদ্ধান্তের ভার অর্পন করা হয়। এর ফল আমাদের সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ঠ। এই ধর্মনিরপেক্ষ বিবেকের কল্যাণেই তথাকথিত প্রগতির নামে সারা বিশ্বে আজ অশ্লিলতা এবং উলঙ্গপনার ঝড় উঠেছে। পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে ব্যাভিচারকেও বৈধতার সনদ দিয়েছে এ প্রগতি। এমনকি কয়েক বছর আগে বৃটেনের সংসদে প্রবল করতালীর মধ্যে দিয়ে সমকামিতার বিলও মঞ্জুর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ বিবেকের কল্যাণে আজ মাহরাম নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনেরও দাবী উঠেছে। অথচ যারা মনুষ্য সমাজের শিষ্টাচার এবং শালীনতার সমস্থ গুণ ছিনিয়ে নিয়ে সমাজকে অশ্লিলতার এ চরম সীমায় নিয়ে গেছে; তারাও বুদ্ধি-জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দাবিদার। কিন্তু তারা আপন বিবেক-বুদ্ধিকেই নিজের একমাত্র পথ প্রদর্শক বানিয়ে নিয়েছে। এমন বিবেক-বুদ্ধির কাছে চরম ঘৃনিত, নিকৃষ্ট এবং নিন্দনীয় কাজের স্বপক্ষেও অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুব সহজেই মিলে যাবে। উদাহরণত: হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা শুনলে আজও মানুষ নিজের অজান্তেই ক্ষেপে উটে। যে ধংসযজ্ঞের শাস্তি সে শহরদ্বয়ের মানুষ এতবছর পর আজও ভোগ করছে। যে পরমানু অস্ত্র নিক্ষেপের কারণে সে শহরদ্বয়ে এক বড় ধংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল; ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকার মত বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থে সে এটম বোমা সম্পর্কে লিখা হয়েছে:

“Former prime minister Churchill estimated that by shortening the war the atomic bomb had saved the lives of 10,00,000 U.S soldiers and 2,50,000 British soldiers.”
(ব্রিটানিকা ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৪৭, প্রবন্ধ: এটোমবোমা)

অর্থাৎ “সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইষ্টন চার্চিল মনে করেন যে, এটমবোমা যুদ্ধ সংক্ষেপ করে দশলক্ষ মার্কিন সৈন্য এবং আড়াই লক্ষ বৃটিশ সৈন্যের জীবন রক্ষা করেছে।”

এবার চিন্তা করে দেখুন, এধরণের যুক্তির অবতারণা করা হলে কোন জুলুম বর্বরতাকে কি আর বিবেক-বুদ্ধির পরিপন্থী বলা যেতে পারে? মুক্ত বিবেক প্রসূত ব্যাখার এধরণের অনেক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করে এখানে আরেকটি উদাহরণ উল্লেখ করব, যাতে মুক্ত বিবেক-বুদ্ধির স্বরূপ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ঠ হয়ে যায়।

ইসলামী ইতিহাসে ‘বাতেনিয়া’ নামক এক পথভ্রষ্ট ফেরকার উদ্ভব ঘটেছিল। সে ফেরকার এক লিডার উবায়দুল্লাহ আল কিরওয়ানী লিখেছেন:

“এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির দাবিদার হওয়া সত্বেও এমন বোকামী করতে পারে যে, স্বীয় স্ত্রী অপেক্ষা সুন্দরী কন্যা বা বোন তার ঘরে রয়েছে; অথচ এদেরকে নিজের জন্য হারাম সাব্যস্ত করে তাকে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেয়। এই নির্বোধদের সামান্য বিবেক-বুদ্ধি থাকলে তারা বুঝত যে, কোন অপরিচিত ব্যক্তির তুলনায় স্বীয় রূপসী কন্যা বা বোনকে বিয়ে করার অধিকার তারই সবচেয়ে বেশি ছিল।”

একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুনতো, যে বিবেক ঐশ্বরিক জ্ঞান তথা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে মুক্ত, তার কাছে এই যুক্তি খন্ডনের বিবেকপ্রসূত কোন ব্যাখ্যা আছে কি? বাস্তবতা হল কোন স্বাধীন বিবেকের কাছে এই যুক্তির কোন জবাব নেই। তাই শত শত বছর পর উবায়দুল্লাহ কিরওয়ানীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। পশ্চিমা দেশে আজ মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয়) নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনের দাবী উঠছে।

বস্তুত: ভাল মন্দের ফায়সালার ভার যদি শুধু বিবেক-বুদ্ধির উপর ন্যাস্ত করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন জীবনের কোন অংশই নিরাপদ থাকবেনা; তেমনি ভাবে প্রত্যেকের বিবেক-বুদ্ধি অন্যের চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণে মানুষ পরস্পর বিরোধী এমনসব ভুলের মধ্যে ফেঁসে যাবে, যা থেকে নিস্কৃতির আর কোন উপায় থাকবেনা। কারণ, স্বাধীন বিবেক-বুদ্ধির কারণে সবাই নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখবে; নিজের অনুকূলে ভালমন্দের ফায়সালা করতে চেষ্টা করবে। যার কারণে যে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত স্বার্থদুষ্ট হয়ে পড়বে। মুলত: তখন মানুষ তার পাশবিক কামনা ও জৈবিক তাড়নার গোলামে পরিণত হবে। এজন্যই এমন ‘আক্বল’ বা বুদ্ধিকে কুরআনের পরিভাষায় ‘হাওয়া’ বা প্রবৃত্তি বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

“সত্য যদি সেসব লোকদের প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে যেত, তাহলে আকাশ, জমিন এবং সৃষ্টিকুলর মাঝে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হতো।”

আইন দর্শনের দার্শনিকদের এক দলের মতে চরিত্রকে বলা হয় “Cognitvist theory.” বিখ্যাত আইনবিদ ড. ফ্রয়েডমিন এই মূলনীতির সারসংক্ষেপ এভাবে বর্ণনা করেছেন:

“Reason is and ought only to be the slave of the passions and can never pretend to any other office than to serve and obey them-Legal theory (p.36.”

“বুদ্ধিতো মানবীয় আবেগ ও প্রবৃত্তির গোলাম মাত্র। আর প্রবৃত্তির গোলাম হওয়াটাই তার জন্য যুক্তিযুক্ত। কেননা আবেগ ছাড়া বুদ্ধি কোন কাজই করতে পারে না। সে কেবল আবেগের অনুস্বরণ করে।”

তিনি আরও লিখেছেন:

“Every thing else but also words like ‘good’, ‘bad’, ‘Ought’, ‘worthy’ are purely emotive and there cannot be such a thing as ethical and moral science” -(P. 36-37)

অর্থাৎ, “প্রত্যেক বিষয় এমনকি ভাল-মন্দ, আবশ্যক-অনাবশ্যক ও উপযুক্ত-অনুপযুক্ত হওয়ার ধারণা হচ্ছে আবেগপ্রসূত এবং নৈতিকতা বলতে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই।”

চরিত্রের এই ব্যাখ্যাটা আইন দর্শনের ভিত্তি হওয়ার জন্য যতই মন্দ সাব্যস্ত হোকনা কেন এটি কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ বিবেকের বস্তুনিষ্ট এবং বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ। কোন ধর্মরিপেক্ষ বিবেকের কাছে একে অস্বীকার করার কোন যুক্তি নেই। বাস্তব সত্য হল এটাই যে, ধর্মরিপেক্ষতার ফলে নৈতিকতা বলতে কোন কিছুই থাকবে না এবং কথাও কাজের উপর প্রবৃত্তিজাত আবেগ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়ন্ত্রণ চলবে না। নৈতিকতা এবং ধর্মনিপেক্ষতা সহাবস্থানে থাকতে পারে না। কারণ, যখন মানুষের অন্তর কোন একটি বস্তুকে খারাপ সাব্যস্ত করবে; কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ তথা স্বাধীন বিবেকের কাছে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করার কোন যুক্তি না থাকার কারণে সেটাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। পশ্চিমা চিন্তাবিদগণ আজ সেই অসহায়ত্বের শিকার। বিগত কয়েক বছর পূর্বে বৃটেনের পার্লামেন্টে সমকামীতার বৈধতার যে বিল পাশ হল, তার সাথে সে দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী একাত্ম হতে পারেননি। তবুও সেটাকে প্রত্যাখ্যানের স্বাধীন বিবেক প্রসূত কোন যুক্তি না থাকায় তারা সেটাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়ার আদালতও সমকামীতাকে বৈধ করে দিয়েছে। যদিও সে দেশের সুশিল সমাজ একে ভাল চোঁখে দেখেন না। কিন্তু প্রগতিবাদের সয়লাবে এটার বিরোধিতা করার মত যুক্তি তাদের কাছে নেই।

আইনবিদগণ আজ খুবই চিন্তিত যে, মুক্তবুদ্ধির এই অপ্রতিরোধ্য শক্তির মাঝে এমন কী নীতি অবলম্বন করা যায়, যে নীতি ভাল মন্দের বিচারের জন্য মানদন্ড হিসেবে কাজ করবে। যার ফলে কিছু উচ্চ মানবীয় গুণাবলী সংরক্ষিত এবং অপরিবর্তনীয় থাকবে।
এ ব্যাপারে এক মার্কিন জজ বিচারপতি কর্ডোজো লিখেছেন:

"আইনের জন্য আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হল, আইনের এমন একটি মূলনীতি তৈরী করা, যা হবে স্থির ও অপরিবর্তনশীল। বিবদমান পরিস্থিতির চাহিদাগুলোর মাঝে সমন্বয় বিধানকারী।" - The growth of the low.

কিন্তু এটা মানবীয় বিবেকপ্রসূত দর্শনের পক্ষে সম্ভব নয়। বস্তুত: কোন আইনকে স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় করতে হলে তার পেছনে শক্তিশালী যুক্তি প্রয়োজন। কিন্তু কোন ধর্মরিপেক্ষ তথা স্বাধীন বিবেক এমন যুক্তি পেশ করতে অক্ষম। কারণ, আজকের মানুষ কোন একটি আইনকে স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় বলে স্থির করবে; কালকের মানুষ সে আইনকেই স্থায়ী এবং অপরিবর্তনশীল হওয়ার অযোগ্য বলে ঘোষণা করবে। সুতরাং বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি মাত্র পথই হল, মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধিকে প্রবৃত্তির গোলাম না বানিয়ে সেই স্বত্তার গোলাম বানাবে, যিনি তার এবং সমগ্র মহাজগতের স্রষ্টা। যেহেতু তিনি পৃথিবীর আবর্তন-বিবর্তন এবং স্রষ্টা হিসেবে সৃষ্টির সকল বিষয়ে সম্যক অবগত; সেহেতু তিনি ছাড়া আর কেহ বলতে পারবেনা মানুষের জন্য কোন আইন কল্যাণকর ও অপরিবর্তনীয় এবং কোন আইনটি অকল্যাণকর ও পরিত্যাজ্য।

প্রখ্যাত আইন প্রণেতা জর্জ প্যাটন যথার্থই বলেছেন:

“What interests should the ideal legal system protect? this is a question of values, in which legal philosophy plays its part…….But however much we desire the help of philosophy it is difficult to obtain, no agreed scale of values has ever Been reached indeed it is only in religion that we can find a basis, and the truths of religion must be accepted by faith or intuition and not purely as the result of logical argument.”
(Paton : Jurisprudence P. 121)

“আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি আদর্শ সমাজে কোন কোন বিষয়গুলো সংরক্ষণ করা উচিত? এটি মূল্যবোধ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আইন দর্শন এতদসংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা দর্শনের কাছে যতই সাহায্য প্রার্থনা করি, ততই এই প্রশ্নের উত্তর মেলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ, মূল্যবোধের এখন পর্যন্ত কোন সর্বসম্মত মাপকাঠি জানা যায়নি। বস্তুত: একমাত্র ধর্মই হল এমন একটি বস্তু যাতে আমরা এর একটি শক্ত ভিত খুজে পাই। তবে ধর্মীয় তত্তকে কেবল যৌক্তিক প্রমাণ দিয়ে বিচার করলে চলবে না বরং গভীর অনূরাগ এবং বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে হবে।”

মোটকথা হল, কোন বিষয়ের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাজাত বিবেক-বুদ্ধি সম্পুর্ণরূপে ব্যার্থ হয়েছে। সমাধানে পৌছার একটিমাত্র পথই হল আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান তথা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে দিক নির্দেশনা গ্রহণ করা। ভাল-মন্দকে ঐশ্বরিক জ্ঞানের মানদন্ডে বিচার করা। আর এ ঐশ্বরিক বিধি-বিধানই সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

“যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ হতে আগত নিদর্শন অনুস্বরণ করে, সে কি তার মত? যার কাছে তার মন্দ কর্মসমুহ ভাল মনে হয় এবং সে তার প্রবৃত্তির অনুস্বরণ করে।” (মুহাম্মদ : ১৪)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:

“আপনার প্রতিপালকের বাণী যথার্থ সত্য ও ভারসাম্যপূর্ণ। তার বাণীর কোন পরিবর্তনশীল নেই। তিনি শ্রবনকারী মহাজ্ঞানী। আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন, তবে তারা আল্লাহর পথ থেকে আপনাকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুস্বরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।” (আনআম: ১১৫)

---------------------------------------------
আহমেদ কামাল সেলিম
কলাম লেখক, ব্লগার।

No comments:

Post a Comment

Pages