মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Tuesday, May 21, 2013

হাবা ম.খা আলমগীর

হাবা ম.খা আলমগীর

রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে নিজ দলের মধ্যেই তোপের মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। থাইল্যান্ড সফররত খোদ প্রধানমন্ত্রিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে ও কুমিল্লায় একাধিক অনুষ্ঠানে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ১০-১২ জন নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে । 

আমরা যতদুর জেনেছি রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা সমাবেশ করার অনুমোদনর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার এবং জনদুর্ভোগ লাঘব করতে ঢাকায় সভা-সমাবেশের জন্য মাঠ বা খোলা জায়গা নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢালাওভাবে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একজন অবিবেচক অপরিণামদর্শী এবং সেচ্ছাচারী রাজনীতিকের পরিচয় দিয়েছ্নে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সময় বেঁধে দিয়ে ঢালাওভাবে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে একজন আমলা ছিলেন তা প্রমাণ করেছেন। তিনি এখনো রাজনীতিবিদ হতে পারেননি। আমি মনে করি, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। সভা-সমাবেশ বন্ধ করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।'

এই সিদ্ধান্তে বিরোধী দলের চেয়ে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। এর ফলে আওয়ামী লীগ মারাত্বক ইমেজ সংকটে পড়েছে। অনাখাঙ্খিত ভাবে বিরোধী দলের হাতে একটি অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে। যদিও এ অস্ত্রকে কাজে লাগানোর সামর্থ্য যোগ্যতা কোনটাই এখন বিরোধী দলের নেই।  বিরোধী দল এটাকে জরুরী অবস্থার শামিল বলে মন্তব্য করেছে। অনেকে মনে করেন ক্ষমতাসীন দল  আগামী সাধারণ নির্বাচনে তাদের ভরাঢুবি নিশ্চিত জেনে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে পাকাপুক্ত করার জন্য জরুরী অবস্থা জারীর পরিকল্পনা করছে। বর্তমান ঘোষনা তার একটি ডেমো মাত্র। সমালোচকরা বলছেন এক মাসের নিষেধাজ্ঝা দিয়ে পরিস্থিতি আন্দাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  
গত মাসে সাভারে ভবনধসের ঘটনা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এবার রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর ঢালাওভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলে তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে সরকারের ভেতরের সমন্বয়হীনতাও প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে শেয়ারবাজার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, টিপাইমুখ বাঁধ, তিস্তা চুক্তি, অন্তর্বর্তী সরকার ও রানা প্লাজা ধস নিয়ে মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বক্তব্যে সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার চিত্র ফুটে ওঠে। সরকারের ভাবমুর্তির এই সব ছিদ্র দিয়ে  ভিতরের ভঙ্গুর অবস্থা জন সম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। সর্বশেষ সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কয়েক রকম বক্তব্য পাওয়া যায় সরকারি মহল থেকে। এর মাধ্যমে তাদের সমন্বয়হীনতা এবং পারস্পরিক দন্ব ও মত পার্থক্য প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।
রবিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে বলেন, যারা সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশকে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেয়, জনসাধারণের ওপর অত্যাচার করে, সভা-সমাবেশের নামে গাড়ি ভাঙচুর করে, দোকানপাটে আগুন দেয়, অনুমতির অসদ্ব্যবহার করে- তাদের বা কোনো দলকে এক মাস সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। সারা দেশেই সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, নাকি শুধু রাজধানীতে মন্ত্রী তা স্পষ্ট করেননি।
সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে ওই দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সব সময় সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা যায় না। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে প্রাণহানি বেশি না হলেও অনেক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি প্রয়োজন। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিস্তু এটা যে একটা উদ্ভট এবং স্থুল যুক্তি তা সর্ব মহলে আলোচিত হয়েছে। দেশের এক কোনে ঝড় পরবর্তী ত্রান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সমা সমাবেশ সহ সব ধরনের কর্মসূচি নিযিদ্ধ করতে হবে এমন  কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আর যেই মুহুর্তে এই বক্তব্য তখন পর্যন্ত দুর্গতদের মধ্যে ত্রান সহায়তাও পৌছেনি। 
এরপর রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক ব্যাখ্যায় বলে, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যদি কোনো রাজনৈতিক দল এমন কোনো কর্মসূচি দেয়, যাতে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা নাশকতার আশঙ্কা থাকে বা সেরূপ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেসব দলের সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেবে না সরকার।
অপরিনামদর্শী এসব নের্তৃবৃন্দের যাচ্ছে তাই বক্তব্য আওয়ামীলীগের ডুবন্ত তরীকে আরও দ্রুত নিমজ্জিত করতে সাহায্য করছে।  

No comments:

Post a Comment

Pages