মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Wednesday, May 22, 2013

রিমান্ডে নির্যাতন এবং অন্ধ বিচার ব্যবস্থা

রিমান্ডে নির্যাতন এবং অন্ধ বিচার ব্যবস্থা
শিবির সভাপতিকে রিমান্ডের পর আদালতে নেয়া হচ্ছে
 আমরা জানি রিমান্ড মানে হচ্ছে পুলিশী হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে যে ধরনের নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে তাতে রিমান্ডের ধারণাটাই পাল্টে গেছে। 

রিমান্ডে নিয়ে ইন্টেরোগেশন এর ধারণা আমরা অতীতের সব সরকার থেকেই কমবেশি পেয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক বন্দিদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তা অতীতের সকল রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে যে কালো অধ্যায় সৃষ্টি করেছে তা আগের সকল সৈরশাষককে হার মানিয়েছে। 

যে সামরিক শাষকের আমলে গণতন্ত্র সবচেয়ে বিপন্ন ছিল বলে মনে করা হয় সেই সৈরাচারী এরশাদের আমলেও এত বিপূল সংখ্যক রাজনৈতিক বন্দির উপর এমন ভয়ংকর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। চার বছর বাদ দিয়ে গত কয়েক মাসের কথাই যদি ধরি তাহলেও রীতিমত আতংকিত হতে হয়। 

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা যারাই বন্দি হয়েছেন বা রিমান্ডে গেছেন সবাইকেই রিমান্ড বা জেল থেকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মির্জা ফখরুল চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে। আরও যারা সদ্য জামিন লাভ করেছেন তাদের অনেকেই সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরীর অবস্থাও ভালো নেই বলে আমরা জানি। বর্তমান দেশজ রাজনীতির পূতিগন্ধময় গলি সম্পর্কে যে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এমন একজন ধর্মনেতাকে এত লম্বা সময়ের রিমান্ড এই প্রথম। 

আমাদেরকে সবচেয়ে আতংকিত  এবং উদ্বিগ্ন করেছে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এর রিমান্ড। গতকাল আদালতে তাকে যে ভাবে আমরা দেখেছি তা গণতন্ত্রের জন্য একটি কল্পনাতীত বিষয়। 

আমার মনে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে, আমার দেশে আদালত, বিচার ব্যাবস্থার আদৌ প্রয়োজন আছে কি? বিচারিক সাজা বা দন্ডের আগেই যদি এমন সাজা আর নির্যাতন ভোগ করতে হয় তবে আর আদালতের কিইবা প্রয়োজন। তার এমন অবস্থার জন্য দায়ীদের জবাবদিহী করা তো দুরে থাক হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়ার মত মানবিকতাটুকুও আদালত দেখাতে পারলেন না। 

এর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার পক্ষপাতদুষ্টতা অথবা অক্ষমতা প্রসূত অন্ধত্ব চরম নগ্নভাবে আমাদের সামনে এসেছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা যে কত ভঙ্গুর অবস্থায় এসে ঠেকেছে তা খুবই কঠিনভাবে বুঝিয়েছে। আদালত সত্যিকার অর্থেই কালো কাপড়ে চোখ বেধে অন্ধত্ব বরণ করে নিয়েছে। 

শিবির সভাপতির এই দীর্ঘ রিমান্ড বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক। মোস্ট ওয়ান্টেড  কোন সন্ত্রাসীরও এমন রিমান্ড এ যাবত কালে হয়নি। মেধাবী একজন ছাত্রনেতার কী এমন অপরাধ যে তাকে এত দীর্ঘ রিমান্ড আর ইন্টেরোগেশন এর প্রয়োজন পড়লো? 

সে এমন কোন আন্ডার ওয়ার্লড গ্যাং এর নেতাও নয় যে তাকে ইন্টেরোগেট করে ক্রিমিনালদের খোঁজ বের করতে হবে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার দমন পীড়ণের মাধ্যমে বিরোধী নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে রাখতে চায়। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি অনিহা সৃষ্টি করে একদলীয় বাকশালের পথ সুগম করতে চায়। 

কিন্তু আমরা জানি অন্ধকার যত গভীর হয় সোবহে সাদিক হয় তত নিকটবর্তী। ততক্ষণে অন্ধকার এই পথচলায় ইসলামিস্টদের হয়ত একটু বেশিই ত্যাগ শিকার করা লাগতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Pages