মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Saturday, May 25, 2013

অপূর্ণ অপ্সরা!

কয়েক ধাপ সিড়ি পেরিয়ে মার্কেটের বারান্দায় উঠে এলাম। আমি যাব ৭ম তলায়। তাই লিফট যেদিকে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। সময়টা সকাল সাড়ে নয়টার মত হবে। আমি যে লিফটটির সামনে দাড়িয়ে সেটা মূলত মার্কেটের উপরের ফ্লোরগুলোতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের অফিস এর যাতায়াতে ব্যাবহৃত হয়। এ সময়টাতে মানুষের আনাগুনা তেমন একটা থাকেনা। আরেকটু পরে সাধারণত ১০ টার কাছাকাছি সময়ে লোক সমাগম শুরু হয়। যে কারণে  লিফটের সামনের ওয়েটিং স্পেসটি ফাঁকা। ছোট একটি মেয়ে, বয়স যতদুর ১০/১২ হবে ধারণা করলাম, একা দাড়িয়ে আছে ওখানে। মুখটা অন্যদিকে ফেরানো। আমার মনে উৎসুক্য সৃষ্টি হল। এই পিচ্চি মেয়েটি উপরে কই যাবে। এখানেতো সবই অফিস। উপরের ফ্লোরগুলোতে কোন ইস্কুল টিস্কুলওতো নেই। পরক্ষণে ভাবলাম কোন অফিসের কারো আপনজন হতে পারে ওঁ। ভাবছি মেয়েটির গালে একটা ঠোকা দিয়ে বলব 'কিতাগো টুনটুনি উফরে খই যাইতায়?' এটা আমার অভ্যাস। এই বয়সের পিচ্চিদেরকে আমি এভাবেই আদর করি। কিন্তু যখন আরও নিকটবর্তী হলাম তখন ব্যাপারটা আমার কাছে একটু গোলমেলে ঠেকলো। উচ্চতা তো ঠিক আছে কিন্তু দেহের প্রস্ত এবং সার্বিকভাবে দেহের কাঠামোটা যেন ঠিক খাপ খাচ্ছেনা। পোষাকটাও চোখে পড়ল। এই বয়েসের মেয়ে এমন মার্জিত বেশ ভূষার কামিস পরার কথা নয়। ফ্রক বা একটু ছেলে মানুষি টাইপের চটকদার থ্রীপিছ ইত্যাদি পরবে এটাই স্বাভাবিক। কাধে ঝুলানো ব্যাগটাও নজরে পড়ল। সর্বোপরি পিচ্চিটাকে আর পিচ্ছি বলে মনে হচ্ছিলনা। কিন্তু আমি তার পেছনে থাকায় মুখটা দেখতে পাচ্ছি না। ইত্যবসরে লিফট এসে গেলো। মেয়েটি লিফটে উঠলো। আমিও।
লিফটের কিবোর্ড প্যানেলে ফ্লোর নাম্বার চেপে যখন সোজা হয়ে দাড়ালাম তখন আমি একেবারে থ বনে গেলাম। কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে সামনের মেয়েটির পানে তাকিয়ে রইলাম। সামনে যাকে দেখছি সে কোন পিচ্চি মেয়ে নয় পরিপূর্ণ বয়েসের ভরা যৌবনা একজন সুন্দরী তরুণী। গোলগাল গড়নের হাস্যোজ্জল চেহারা। চিকন গোলাপি ঠোটে স্নিগ্ধ হাসি লেপটে আছে। ডাগর ডাগর পটলচেরা অক্ষিযুগলের উপর হালকা চিকন ফ্রেমের গ্লাস। ওড়নাটা পরিপাটি করে মাথা পেচিয়ে সযতনে বক্ষদেশের উপর প্রলম্বিত। যেন ওড়নার আবরণের ভেতর থেকে প্রস্ফুটিত শিশির ভেজা স্নিগ্ধ গোলাপ। স্তম্ভিত অবস্থা থেকে আমি তখন কিছুটা সম্মোহিত। নিজেকে বড় বোকাচোকা মনে হচ্ছিল। ভাগ্য ভাল যে টুনটুনির গালে টোকা দেইনি। তা না হলে কি যে ঘটতো আল্লাহ মালুম! মেয়েটিকে দেখে আমি যত না সম্মোহিত হয়েছি তার চেয়ে বেশি আহত বোধ করেছি। আহত হয়েছি স্রষ্টার কার্পণ্য দেখে। যাকে অকৃপন হাতে রূপ সুন্দর্য্য ঢেলে দিয়ে এত সুন্দর অবয়ব দিলেন তার দৈহিক উচ্চতার ক্ষেত্রে এত কৃপনতা কেন করলেন! বড়জোর আরও আট/দশ ইঞ্চি উচ্চতা পেলেই তো মেয়েটি তার পূর্ণতা পেয়ে যেত। আমি নিজেকে এতটা আহতবোধ করেছিলাম যে সেদিন অফিসে কলিগদের সাথেও ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছিলাম। পরবর্তীতে এ জন্য আমাকে অনেক তির্যক এবং বিদ্রুপাত্বক কথা তাদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে।
এখনো যখন মেয়েটির কথা মনে হয়, তখন মনের কোন এক কোনে চিন চিন ব্যথা অনুভব করি। স্রষ্টার প্রতি অভিমান হয়। এ রকম আরও একটি অভিজ্ঞতা আমার আছে। অবশ্য সরাসরি নয় ফটোতে দেখেছি। আমার এক ফ্রেন্ডের আত্মীয়। ব্রিটিশ বাংলাদেশী। মেয়েটি রূপ সুন্দর্য্য দৈহিক গড়ন সব দিক থেকেই চোখে পড়ার মত। কিন্তু তার একটি চোখ অর্ধ নির্মিলিত। ঐ চোখের পাতা পরিপূর্ণরুপে মেলতে পারে না।
স্রষ্টা হয়ত তার পূর্ণতার বৈশিষ্ঠের জানান দিতে গিয়েই সৃষ্টিকে অপূর্ণ রাখেন। স্রষ্টা ব্যাতিত কেউই যে পরিপূর্ণ নয় তা মনেপ্রাণে বুঝি এবং বিশ্বাস করি। তবুও অনেক সময় স্রষ্টাকে বড় রহস্যময় মনে হয়।

No comments:

Post a Comment

Pages