মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Thursday, August 16, 2018

মাহাত্ম্যপুর্ন আরাফাতের দিন: একত্ববাদিদের অদ্বিতীয় মিলনমেলা

আরাফাতের ময়দান ও তৎসংলগ্ন 'মসজিদে নিমরা'র দৃশ্য

-মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ
------------------------------------------------------------

পৃথিবীর দিন সমুহের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি দিন হচ্ছে আরাফাতের দিন। এ দিনটি মুসলমানদের মহা ঐক্যের দিন। মহা অঙ্গীকারের দিন। পরম গর্বের দিন। মহা মুক্তির দিন। একত্ববাদিদের অদ্বিতীয় এক মিলনমেলা।

প্রতি বছর এ দিনেই লাখ লাখ হাজিগন মসজিদে নামিরার পাশে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সবার কণ্ঠে একই আওয়াজ ‘তালবিয়া’। মুসলমানরা দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন- “লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা.......।” 
অর্থ- “আমি হাজির তোমার সান্নিধ্যে, হে আল্লাহ! আমি হাজির তোমার দ্বারে, আমি হাজির তোমার দরজায়, তোমার কোনো শরিক নেই...”। 

ইহরামের সাদা দুইটি বিশেষ পোশাক পড়ে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেন এবং তাঁর বিধান পালনের ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেন। এই ময়দান থেকে বিজ্ঞ ইসলামী নেতৃবৃন্দরা ভাষণ দেন এবং বিশ্ববাসীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আত্মিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক দিকসহ জীবনাচরণের সার্বিক সমস্যার ইসলাম ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধানমুলক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এ দিনেই বিদায় হজে রাসূল (সা.) বিশ্ববাসীকে দিকনির্দেশনামুলক ভাষণ দান করেছিলেন। রাসূল (সা.) এর ঐতিহাসিক এ ভাষনটি মুসলমানদের পথের পাথেয়। ইসলামের ইতিহাসের পাতায় রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.)এর এ ভাষণটি স্বর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে।

৯ জিলহজ। আরাফাতের দিন। মানবজাতি ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে আরাফাতের দিনের অনেক ফজিলত, বৈশিষ্ট্য ও করণীয় রয়েছে। এ দিনে আল্লাহ তা’লা পথিবীর সকল মানব সন্তানের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। পৃথিবীতে যত মানুষ আগমনকারী ছিল তাদের সবাইকে আরাফাত উপত্যকায় একত্রিত করেন। তখন তারা সবাই ছিল পিঁপিলিকার মতো ক্ষুদ্রাকৃতির। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন: “আমি কী তোমাদের প্রতিপালক নই? সকলে উত্তরে বলেছিল, হ্যাঁ! আমরা সকলে এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি”। সত্যিই সৃষ্টিকর্তার সমীপে মানব জাতির এটাই সেরা অঙ্গীকার। তাই এটি মহা অঙ্গীকারের দিন।

মুসলমানদের জন্য এ দিনটি পরম গর্বের। এ দিনে আল্লাহ তা’লা ইসলামকে একমাত্র ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি মুসলমানদের একক গৌরব। একমাত্র ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোন ধর্মে এমন গৌরবময় ইতিহাস নেই। হযরত উমর (রা) বর্ণনা করেন, জনৈক ইয়াহুদী তাঁকে বলল: হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কীতাবে (কুরআনে) একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী স¤প্রদায়ের ওপর অবতীর্ণ হতো, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে আয়াতটি কী? উত্তরে সে বলল, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। এবং তোমাদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়েদা -৩) হযরত উমর বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল, তা আমরা জানি। তিনি সে দিন আরাফাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর সেটা ছিল জুমার দিন। (বুখারি: ৪৫)

এ দিনে আল্লাহ তা’লা অসংখ্য গোনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন তাই এ দিনটি মহা মুক্তির দিন। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাতের দিন আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং তোমাদের নিয়ে ফিরিশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, দেখো! আমার বান্দারা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জান্নাতের আশায় আমার কাছে ছুটে এসেছে। তোমাদের গুনাহ যদি (মরভুমির) বালুকণা কিংবা বৃষ্টির ফোটা অথবা সমুদ্রের ফেনা সমানও হয় তাও আমি মাফ করে দিলাম। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যাও। তোমাদেরকে এবং তোমরা যাদের জন্য সুপারিশ করেছ তাদেরকেও ক্ষমা করে দেওয়া হলো। (সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব- ১১০৬, ১১১২)

আরাফাতের দিনের সকল দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, শ্রেষ্ট দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দোয়া। এ দিন আমিও আমার পূর্বেকার সকল নবীদের বলা সর্বোত্তম বাক্য হচ্ছে- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির।” অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তারই। তিনি সর্বশক্তিমান (তিরমিযী-৩৫৮৫)। মার্জনার এ দিনে আল্লাহর কাছে অধিক হারে তাওবা ও ইস্তিগফার করা খুবই উত্তম।
আবু কাতাদাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) কে আরাফাতের দিনের রোজা স¤পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিঁনি বলেন, এতে বিগত ও আগামী বছরের গুনাহর কাফফারা হয়ে যায় (তিরমিজি-১২৫০)। তাই এ দিনে রোজা রাখা অনেক পুণ্যের কাজ।

মহিমাম্বিত দিন সমুহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ দিনে সারা বিশ্বের মুসলমানরা আরাফাতের ময়দানে বর্ণ-গোত্র, ধনী-গরীব সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই স্থানে সমবেত হন। পরস্পরের মধ্যে একতার বন্ধন রচিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেন।
---------------------------------------------------
মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
(নিবন্ধকার ও কলাম লেখক)
শিক্ষক, জামেয়া ইসলামিয়া আনওয়ারে মদিনা মাদরাসা, সিলেট।
Email- hamidsylbd@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Pages