কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ৫৮টি মুসলিম দেশের কারো সাহস নেই আঙ্গুল তুলে কথা বলার, মাথা উঁচু করে সাম্রাজ্যবাদীদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করার মত মনে হয় কেউ নেই পৃথিবীতে। এ পরিস্থিতিতে আরাফার ময়দানে মুসলমানদের সুবিশাল জমায়েতের গুরুত্ব অনেক। এখান থেকে বিশ্বশান্তির যে দিক নির্দেশনা আসে তা বাস্তবায়ন করা সময়ের অনিবার্য দাবি। তাছাড়া হজ্জ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ মক্কাশরীফ ও মদীনা শরীফে একত্রিত হন। আমরা আশা করব, মুসলিম বিশ্বের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা আলোচনায় মিলিত হবেন এবং মুসলিমবিশ্বের পাস্পরিক ঐক্য, সংহতির উপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে এমন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন যাতে বিশ্বের মুসলমানগণ কুফরী শক্তির অন্যায় আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে। নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। আরাফার ঘোষণা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন। বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোাযাগী হবেন।-------------------------
-ওলীউর রহমান
-------------------------
হজ্জের
অর্থ হলো, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নির্ধারিত নিয়ম
অনুসারে নিদির্ষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ শরীফ এবং সংশ্লিষ্ট
স্থান সমূহের জিয়ারত করা। হজ্জ ইসলামের পঞ্চ রুকনের একটি। যারা অর্থিক ও
শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের উপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ। প্রাচীন
কাল থেকেই আল্লাহপ্রেমিক বান্দারা হজ্জ করে আসছেন। হযরত আদম (আ.)
আল্লাহপাকের হুকুমে এবং জিবরাঈল (আ.) এর দেখানো পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ শরীফের
তাওয়াফ করেছেন। এর পর থেকে এ ঘরের তাওয়াফ ও জিয়ারত অব্যাহত রয়েছে। হযরত
নুহ (আ.) এর সময়কার মহাপ্লাবন এবং তুফানে বায়তুল্লাহ শরীফ লোকচক্ষুর
অন্তরালে চাপা পড়ে যায়। এর পর আল্লাহর হুকুমে হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবা শরীফ
পুনর্নিমাণ করেন এবং আল্লাহর হুকুমে হযরত ইবরাহীম (আ.) এবং হযরত ইসমাঈল
(আ.) কাবা শরীফের তাওয়াফসহ হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড সমাধা করেন। অতঃপর মহান
রাব্বুল আলামীন গোটা বিশ্ব জাহানকে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সামনে তুলে ধরেন
এবং তিনি আল্লাহর হুকুমে ‘মাকামে ইবরাহীম’ অথবা ‘জাবালে আবু কুবাইস’ নামক
পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দুই কানে আঙ্গুল রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ
করে ঘোষণা করেন: ‘লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং
তোমাদের উপর সেই গৃহের হজ্জ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন
কর।’ ইবরাহীম (আ.) এর সেই আহবান থেকে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার বছর অতিবাহিত
হয়ে গেছে। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে
কাবাঘরের তাওয়াফ করছেন। কেউ স্থল পথে, কেউ নৌ-পথে, কেউ আকাশ পথে এসে হজ্জ
করছেন। দিন যত যাচ্ছে বায়তুল্লাহর পানে আগমনকারীদের সংখ্যা তত বাড়ছে।
জাহিলিয়াতের
যুগেও লোকেরা বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও জিয়ারত করত। তবে তারা তাওয়াফ করত
জাহিলী নিয়মে। এতে অনেক অশ্লীল কর্মকান্ডও তারা ঢুকিয়ে দিয়েছিল। নবম
হিজরীতে রাসূল (সা.) এর নির্দেশে হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) এর নেতৃত্বে
সাহাবায়ে কেরামের একটি দল হজ্জ পালন করেন আর এ বছর থেকেই ইসলামের বিধান
অনুসারে এবং হযরত ইবরাহীম (আ.) প্রবর্তিত নিয়ম অনুসারে পালিত হয়ে আসছে।
মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হল পবিত্র হজ্জ। ইসলামী জীবন
দর্শনের উপর পূর্ণ অটল ও অবিচল থাকা হলো হজ্জের প্রধান শিক্ষা। মুসলমানরা
পরকালকে বিশ্বাস করে, সাদা-কালো, ধনী-গরীব, আমীর-ফকীর, রাজা-প্রজা ও
দেশ-গোত্রের ভেদাভেদ ইসলামে নেই। সব মুসলমান একে অপরের ভাই, একই আল্লাহর
বান্দা, একই রাসূলের আদর্শের অনুসারী বা উম্মত, একই কুরআনে বিশ্বাসী, একই
কাবার প্রভূর এবাদতকারী এ বিশ্বাসের এক বাস্তব অনুশীলন হল পবিত্র হজ্জ।
হজ্জের অন্যতম তাৎপর্য ও শিক্ষা হলো, গোটা উম্মাহ তথা মুসলিম মিল্লাতের
বৃহত্তর ঐক্য ও স¤প্রীতি বজায় রাখা বা প্রতিষ্ঠা করা এবং বিশ্বশান্তি
প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা।
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ঘর হল কাবাগৃহ তথা মসজিদে হারাম। পবিত্র কুরআনে কাবাগৃহ কে ‘বায়তে আতিক’ তথা স্বাধীন-মুক্তঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এ ঘরের এত মর্যাদা যে, দুনিয়ার কোন পরাশক্তি বা কোন কাফের অত্যাচারী এ ঘর ধ্বংস করতে পারবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ কাবা ঘরকে কাফের ও অত্যাচারীদের অধিকার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।’ এই কাবাগৃহ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হরমের সীমানার বাইরে আরাফার ময়দান অবস্থিত। এখানে হযরত আদম ও হাওয়ার দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে মিলন ঘটেছিল। এ জন্য এ ময়দানকে আরাফার ময়দান বলা হয়। এখানে ইবরাহীম (আ.) এর প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ রয়েছে। একে বলা হয় মসজিদে নামিরাহ। ময়দানের এক প্রান্তে অবস্থিত জাবালে রাহমাত, যেখানে হেরা গুহা অবস্থিত। জ্বিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ এ ময়দানে মুসলমানদের বিরাট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুবিশাল সম্মেলনে ভাষণ দেন ইমামূল মু’মিনীন বা মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এ ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, সংহতি এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা। এখানে মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববাসীকে আহবান জানান। সকল প্রকার হানাহানি, বিবাদ-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে বিশ্বনবীর উম্মতদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ প্রদান করেন। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির সুমহান আদর্শ তুলে ধরেন। সে ভাষণ শ্রবণ করা হজ্জের একটি অবশ্য পালনীয় বিষয়।
হজ্জের মৌসুমে আরাফার ময়দানে মুসলিম মিল্লাতের যে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এতে উপস্থিত থাকেন লক্ষ লক্ষ হাজীর সাথে খাদীমে হারমাইন শরীফাইনসহ আরবের রাজা-বাদশাহগণ এবং বিশ্বের ৫৮টি মুসলিম দেশের প্রধান বা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এখানে তাদের উপস্থিতিতে বিশ্বশান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে মুনাজাত করা হয়। বর্তমান সময়ে ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই ঘোষণা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটাবিশ্বে। শ্রবণ করে বিমুগ্ধ হয় বিশ্বের অসংখ্য মানুষ। মুসলিম বিশ্বের নেতারা ও সেই শান্তির বাণী শ্রবণ করেন। তবে বর্তমান বিশ্বনেতাদের অন্তকরণে সেই শান্তির বাণী খুব কমই প্রবেশ করে। তাদের হৃদয়ে তেমন পরিবর্তন আসে না। যার দরুণ হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও ‘আরাফার ঘোষণা’ বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেন না তারা। আর একারণেই বিশ্বশান্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববাসী। দুনিয়া জুড়ে নির্যাতিত মুসলমানদের আর্তনাদ শুনেও তাদের অন্তর ব্যথিত হয় না।
গোটা মুসলিম বিশ্বের অবস্থা আজ খুবই নাজুক। বিশ্ব জুড়ে চলছে মুসলিম নির্যাতন। আধুনিক বিজ্ঞানের যতসব মারণাস্ত্র সবগুলোরই পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে কেবল মুসলমানদের উপর। ‘মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই, অলিখিতভাবে এ নিয়ম চালু করেছে বিশ্বমোড়লেরা। কাশ্মির, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগান্তিান, মিয়ানমার ও চীনের নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলো হচ্ছে এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ফিলিস্তিনের গাজা আর মিয়ানমারের রাখাইন আজ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে মুসলমানরা প্রতিদিন লড়াই করছে মৃত্যুর সাথে। নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলোর মুসলমান মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করতে আজ গোটা দুনিয়া ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কারো যেন এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা যেন দেখেও দেখছে না। যারা সারা দুনিয়ার মানুষকে শান্তির বাণী শুনায়, গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের সওদাগরী করে তাদের নেতৃত্বেই চলছে মুসলিম নির্যাতন।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ৫৮টি মুসলিম দেশের কারো সাহস নেই আঙ্গুল তুলে কথা বলার, মাথা উঁচু করে সাম্রাজ্যবাদীদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করার মত মনে হয় কেউ নেই পৃথিবীতে। এ পরিস্থিতিতে আরাফার ময়দানে মুসলমানদের সুবিশাল জমায়েতের গুরুত্ব অনেক। এখান থেকে বিশ্বশান্তির যে দিক নির্দেশনা আসে তা বাস্তবায়ন করা সময়ের অনিবার্য দাবি। তাছাড়া হজ্জ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ মক্কাশরীফ ও মদীনা শরীফে একত্রিত হন। আমরা আশা করব, মুসলিম বিশ্বের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা আলোচনায় মিলিত হবেন এবং মুসলিমবিশ্বের পাস্পরিক ঐক্য, সংহতির উপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে এমন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন যাতে বিশ্বের মুসলমানগণ কুফরী শক্তির অন্যায় আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে। নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। আরাফার ঘোষণা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন। বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোাযাগী হবেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন। ফিলিস্তিনের গাজা, জেরুজালেম, ভারতের আসাম, কাশ্মির ও মিয়ানমারের রাখাইনে বনিআদমদের কান্না থামাতে এগিয়ে আসবেন।
লেখক: পেশ ইমাম ও খতীব, পূর্বভাটপাড়া জামে মসজিদ, ইসলামপুর, মেজরটিলা, সিলেট
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ঘর হল কাবাগৃহ তথা মসজিদে হারাম। পবিত্র কুরআনে কাবাগৃহ কে ‘বায়তে আতিক’ তথা স্বাধীন-মুক্তঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এ ঘরের এত মর্যাদা যে, দুনিয়ার কোন পরাশক্তি বা কোন কাফের অত্যাচারী এ ঘর ধ্বংস করতে পারবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ কাবা ঘরকে কাফের ও অত্যাচারীদের অধিকার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।’ এই কাবাগৃহ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হরমের সীমানার বাইরে আরাফার ময়দান অবস্থিত। এখানে হযরত আদম ও হাওয়ার দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে মিলন ঘটেছিল। এ জন্য এ ময়দানকে আরাফার ময়দান বলা হয়। এখানে ইবরাহীম (আ.) এর প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ রয়েছে। একে বলা হয় মসজিদে নামিরাহ। ময়দানের এক প্রান্তে অবস্থিত জাবালে রাহমাত, যেখানে হেরা গুহা অবস্থিত। জ্বিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ এ ময়দানে মুসলমানদের বিরাট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুবিশাল সম্মেলনে ভাষণ দেন ইমামূল মু’মিনীন বা মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এ ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, সংহতি এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা। এখানে মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববাসীকে আহবান জানান। সকল প্রকার হানাহানি, বিবাদ-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে বিশ্বনবীর উম্মতদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ প্রদান করেন। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির সুমহান আদর্শ তুলে ধরেন। সে ভাষণ শ্রবণ করা হজ্জের একটি অবশ্য পালনীয় বিষয়।
হজ্জের মৌসুমে আরাফার ময়দানে মুসলিম মিল্লাতের যে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এতে উপস্থিত থাকেন লক্ষ লক্ষ হাজীর সাথে খাদীমে হারমাইন শরীফাইনসহ আরবের রাজা-বাদশাহগণ এবং বিশ্বের ৫৮টি মুসলিম দেশের প্রধান বা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এখানে তাদের উপস্থিতিতে বিশ্বশান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে মুনাজাত করা হয়। বর্তমান সময়ে ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই ঘোষণা মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটাবিশ্বে। শ্রবণ করে বিমুগ্ধ হয় বিশ্বের অসংখ্য মানুষ। মুসলিম বিশ্বের নেতারা ও সেই শান্তির বাণী শ্রবণ করেন। তবে বর্তমান বিশ্বনেতাদের অন্তকরণে সেই শান্তির বাণী খুব কমই প্রবেশ করে। তাদের হৃদয়ে তেমন পরিবর্তন আসে না। যার দরুণ হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও ‘আরাফার ঘোষণা’ বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেন না তারা। আর একারণেই বিশ্বশান্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববাসী। দুনিয়া জুড়ে নির্যাতিত মুসলমানদের আর্তনাদ শুনেও তাদের অন্তর ব্যথিত হয় না।
গোটা মুসলিম বিশ্বের অবস্থা আজ খুবই নাজুক। বিশ্ব জুড়ে চলছে মুসলিম নির্যাতন। আধুনিক বিজ্ঞানের যতসব মারণাস্ত্র সবগুলোরই পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে কেবল মুসলমানদের উপর। ‘মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই, অলিখিতভাবে এ নিয়ম চালু করেছে বিশ্বমোড়লেরা। কাশ্মির, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগান্তিান, মিয়ানমার ও চীনের নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলো হচ্ছে এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ফিলিস্তিনের গাজা আর মিয়ানমারের রাখাইন আজ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে মুসলমানরা প্রতিদিন লড়াই করছে মৃত্যুর সাথে। নির্যাতিত মুসলিম জনপদগুলোর মুসলমান মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করতে আজ গোটা দুনিয়া ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কারো যেন এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা যেন দেখেও দেখছে না। যারা সারা দুনিয়ার মানুষকে শান্তির বাণী শুনায়, গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের সওদাগরী করে তাদের নেতৃত্বেই চলছে মুসলিম নির্যাতন।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ৫৮টি মুসলিম দেশের কারো সাহস নেই আঙ্গুল তুলে কথা বলার, মাথা উঁচু করে সাম্রাজ্যবাদীদের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করার মত মনে হয় কেউ নেই পৃথিবীতে। এ পরিস্থিতিতে আরাফার ময়দানে মুসলমানদের সুবিশাল জমায়েতের গুরুত্ব অনেক। এখান থেকে বিশ্বশান্তির যে দিক নির্দেশনা আসে তা বাস্তবায়ন করা সময়ের অনিবার্য দাবি। তাছাড়া হজ্জ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম উলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ মক্কাশরীফ ও মদীনা শরীফে একত্রিত হন। আমরা আশা করব, মুসলিম বিশ্বের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা আলোচনায় মিলিত হবেন এবং মুসলিমবিশ্বের পাস্পরিক ঐক্য, সংহতির উপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে এমন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন যাতে বিশ্বের মুসলমানগণ কুফরী শক্তির অন্যায় আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে। নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। আরাফার ঘোষণা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন। বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোাযাগী হবেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন। ফিলিস্তিনের গাজা, জেরুজালেম, ভারতের আসাম, কাশ্মির ও মিয়ানমারের রাখাইনে বনিআদমদের কান্না থামাতে এগিয়ে আসবেন।
লেখক: পেশ ইমাম ও খতীব, পূর্বভাটপাড়া জামে মসজিদ, ইসলামপুর, মেজরটিলা, সিলেট
No comments:
Post a Comment