মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Sunday, August 19, 2018

কোরবানীর চামড়ার মুল্যধ্বসের নেপথ্যে: অসাধু চক্রকে রুখবে কে?

-মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
===================
পবিত্র ঈদুল আযহা সন্নিকটে। ইসলামের বিধান পালনার্থে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সামর্থবান মুসলমানগণ নিজেদের সাধ্যমত পশু কুরবানি দিবেন। কুরবানির পশুর চামড়া বা চামড়ার বিক্রিত মূল্যের টাকা গরীব, এতীম, মিসকিনের হক। কুরবানি দাতাগণ জবাইকৃত পশুর চামড়া নিজেদের গরীব আত্মীয়, গরীব প্রতিবেশী, এতিমখানা কিংবা কোন মাদরাসার গরীব ফান্ডে দান করেন। পাওনাদাররা গত কয়েক বছর থেকে ভীষণভাবে নিজেদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সারা বছর চামড়া চড়া মূল্যে বিক্রি হলেও কুরবানির ঈদের সময় রহস্যজনকভাবে চামড়ার দাম একেবারে নিচে নেমে আসে। অনেকেই মনে করেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণেই এমনটা হয়। ট্যানারী থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা চামরার মুল্য দিতে স্বেচ্ছাচারী আচরন করেন ছোট বিক্রেতাদের সাথে। চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কুরবানির ঈদে ব্যবসায়ীদের অসাধু উপায় অবলম্বনের বিষয়টি অনেকেই মনে করেন গরীবের অধিকারে লাথি মরার মত।

চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এ থেকে তৈরী হয় ব্যাগ, জুতা, জ্যাকেট সহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যনতুন সৌখিন চামড়াজাত পন্য। এসব বিক্রি করে বিপুল পরিমাণে অর্থ আয়ের সুযোগ রয়েছে। বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তার পরেও মূল্যবান চামড়া সংগ্রহে এতো অবহেলা কেন? দেশ বিদেশে চামড়াজাত পন্যের ভাল চাহিদা থাকা সত্বেও কোরবানীর সময়ে চামড়া সংগ্রহে ট্যানারী ফার্মগুলোর এই অনাগ্রহের কারন কী?

কুরবানির সময় বিশেষ করে দেশের গরীব কওমি মাদরাসাগুলোর  ছাত্র-শিক্ষকরা ঈদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু সারা দিনের পরিশ্রমের পর যখন ক্রেতারা এসে নিজেদের মন মর্জি মাফিক দাম হাঁকেন, তখন মাদরাসাওয়ালাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কারণ তারা সাধারণ ব্যবসায়ী নন। নিজেদের জন্য একটা সিকিও সংগ্রহ করতে সারা দিন মেহনত করেন না। তারা ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারী গরীব, এতীম ছাত্রদের খাবার ও লেখা-পড়ার অর্থ সংগ্রহের জন্য ঈদের আনন্দকে বিসর্জন দেন। তাদের সাথে যখন ক্রেতারা ব্যবসার নামে গেইম শুরু করেন তখন একটা বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। নিরুপায় হয়ে ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও মাদরাসাওয়ালারা পানির দামে চামড়া হস্তান্তর করতে হয়। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আজ থেকে কয়েক বছর আগেও দেখা যেত ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বাসায় বাসায় গিয়ে সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করত। একদিকে চামড়ার দাম কমে যাওয়া আর অপরদিকে বড় ব্যবসায়ীদের অসাধু উপায় অবলম্বন। এই দুইয়ে মিলে ছোট ব্যবসায়ী ও মাদরাসা থেকে চামড়া সংগ্রহকারীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। ন্যায্য মূল্য না পওয়ার কারণে চামড়া সংগ্রহে নিরুৎসাহিত। তারা এখন আর আগের মত বাড়ী বাড়ী গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেন না। আর যারা সংগ্রহ করেন, তারা ঐ তথাকথিত অসাধু ব্যবসায়ীদের কাজটা সহজ করে দেন। কুরবানির সময় এলে সরকার থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের যেন এসব দেখার ও জানার সময় নেই।

গত কয়েক বছর থেকে দেখা যায় অনেক বাসা বাড়ীতে সারা দিন চামড়া পরে থাকে। কেউ সংগ্রহ করতে যায় না। সারা দিনে অপেক্ষার পর কুরবানি দাতাগণ নিরুপায় হয়ে অনেকে কুরবানির পশুর চামড়া পার্শবর্তী আবর্জনার স্তুপে, ড্রেনে বা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়। এতে করে যেমন মূল্যবান চামড়া নষ্ট হয়, ক্ষতি হয় দেশের অর্থনীতির, তেমনি আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য আপনার কুরবানির পশুর বর্জ্য ও এবং অবিক্রিত চামড়া মাটিতে পুতে রাখুন।

-মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
(নিবন্ধকার ও কলাম লেখক)
hamidsylbd@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Pages