মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Monday, December 3, 2018

টঙ্গি এ্যাটাক


----আরিফ রব্বানী----

—কই গেলা তাড়াতাড়ি ভাত দাও? অনেকদিন পর একটা ভালো কাজ করে এলাম।
—কী ভালো কাজ করলেন?
—আজ আমির সাবের সাথে টঙ্গী গেছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি ময়দানে আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না ঐ বদমাইশেরা।
—ঐ বদমাইশ বলতে কারা? 
আরে মাদরাসার ছাত্র আর মোল্লারা।
—পরে?
—পরে কি আবার, আমির নির্দেশ দিল যেভাবে হোক ভেতরে ঢুকতে হবে আমাদের। আমরা স্থানীয় কিছু সাথীদের নিয়ে লাঠির ব্যবস্থা করলাম। তারপর সুযোগ বুঝে হামলে পড়লাম তাদের ওপর। সামনে যাকে পেলাম ইচ্ছেমতো প্যাঁদানি দিলাম। তারা দৌড়াতে লাগল। পেছনে আমরাও দৌড়ালাম। তারা ছিল খালি হাতে তাই আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারেনি।কিন্তু আমরা তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে দিছি। যখম করে দিছি। হাত-পা ভেঙ্গে দিছি। মাথা ফাটিয়ে দিছি। একজন নাকি মারাও গেছে শুনলাম! 
—এই আপনার ভালো কাজ?
—ভালো কাজ না তো কি? মোল্লারা দুইদিন পর পর এর বিরুধিতা করে ওর বিরুধিতা করে। এখন আমাদের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ সাহেবেরও বিরোধিতা শুরু করছে। ওদের ভণ্ডামি দূর হবে এবার।
—আচ্ছা রফিকের বাপ! আপনার কি মনে আছে যখন আপনি মসজিদের ধারেকাছেও যেতেন না, নামাজের খবরও রাখতেন না, দাড়ি তো দুদিন পর পরই কেটে ফেলতেন—তখন আমাদের মসজিদের ইমাম সাব আপনাকে খুব বুঝিয়েছে। নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে। পরকালের শাস্তির কথা শুনিয়েছে। বারবার তাবলীগে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছে। কিন্তু আপনার মন গলেনি। আর হুজুরও হাল ছাড়েননি।  কিন্তু আমাদের দোকান পুড়ে যাওয়ার পর যখন আপনি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন হুজুর এসে এসে আপনাকে শান্ত্বনা দিয়েছে। বুঝিয়েছে। তারপর একদিন তার কথাতেই তিনদিনের জন্য তাবলীগে চলে গেলেন। এরপর আপনার পরিবর্তন এসে গেল। নিয়মিত নামাজ পড়তে লাগলেন। ক্রমান্বয়ে পুরোপুরি দ্বীনের পথে ফিরে এলেন।
—মনে থাকবে না কেন? তবে এই কথা এখানে টেনে আনছ কেন?
—টেনে আনছি এজন্য! যে ইমাম সাবের কারণে তুমি আজ নামাজি হইছ, দাড়ি রাখছ, কুরআন পরছ, মেয়েকে পর্দানশীন বানাইছ, যার কথা শুনে তুমি আজ তাবলীগের সাথী হইছ, হেদায়েত পাইছ—সেই ইমাম সাবও কিন্তু একজন মাদরাসার ছাত্র, একজন মোল্লা। একজন হুজুর। তোমরা আজ যাদের পিটিয়েছ তারাই কিন্তু তোমাদের মত লোকদের সুরাকেরাত ঠিক করে দিয়েছে; ফলে এখন নামাজ শুদ্ধ করে পড়তে পারছ।
—কী বলতেছ এসব?
—তোমার ছোট মেয়ে; যাকে হুজুরের কথাতে মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছ সে আমাকে বলল, তার হুজুর মানে তোমাদের ইমাম সাব,  আজ ক্লাসে এসে নাকি খুব কেঁদেছে। সবাইকে দোয়া করার জন্য বলেছে। একজন কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, তার ছেলে টঙ্গীতে আসন্ন ইজতিমার জন্য কাজে গিয়েছিল। কিন্তু তোমাদের কোন সাথী তাকে পিটিয়ে হাত-পা গুড়ো করে দিয়েছে। এখন নাকি মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
—এই থামো তো! আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি এটা কী করে আসলাম? আমিরের কথাতে কাদের পিটাইলাম? যে আমির কোনদিন মাদরাসায় পা রাখিনি শুধু চিল্লা লাগিয়েছে তার কথায় আমি নবির ওয়ারিসদের শরীর রক্তাক্ত করে আসলাম? এখন নিজেই নিজের প্রতি ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে!
—আচ্ছা বলতো ইসলাম আগে নাকি মাওলানা সাদ?
—অবশ্যই ইসলাম আগে, পরে অন্যসব।
—তাহলে কোন ব্যক্তি যদি ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়; আর সে যদি আমিরও হয় তবুও কি আপনি তার কথা শুনবেন? 
—না! তার কথা কোনক্রমেই শোনা যাবে না। যতক্ষণ না সে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসবে।
—তাহলে মাওলানা সাদের কথা আপনারা কেন শুনছেন? কেন তাকে মান্য করে যাচ্ছেন? কেন তার কথায় উঠবস করছেন?
—দেখো! মাওলানা সাদ সাবের কিছু ইমানবিধ্বংসী আকিদা ছিল কিন্তু সেতো তা থেকে ফিরে আসছে। তারপরও মোল্লারা তার বিরোধিতা করে যাচ্ছে, এজন্যই তো আমরা তাদের ওপর ক্ষেপে আছি।
—মাওলানা সাদ তার কথা থেকে ফিরে আসলেও দুদিন পর আবার সেই কথায় বলে!  ফলে ভারতের আলেমরা নাকি তাকে পথভ্রষ্ট বলেই বিবেচিত করেছে।
—তাই নাকি? আমাদের আমির তো শুধু মোল্লাদের দোষ বলে বেড়ায়। আচ্ছা তুমি এতকিছু জানো কীভাবে? 
—কেন আপনার কথাতেই তো আমি প্রতি বৃহস্পতিবার তামান্নাদের বাসায় তালিম শুনতে যাই। সেখানে যিনি তালিম করায় সে-ই আমাদের এসব বলেছে। মাওলানা সাদ যেসব আপত্তিকর কথা বলেছে সেগুলোও আমাদের দেখিয়েছে। সাথে একটি বই-ও দিছে আমাদের। এই দেখুন বইটি........

বই পড়ার পর রফিক মিয়া তার ভুল বুঝতে পারল এবং তওবা করে আলেমদের দলে ফিরে আসল।

বিঃদ্রঃ বাস্তব প্রেক্ষাপটের ওপর কাল্পনিক গল্প। উদ্দেশ্য: সাদপন্থীরা যেন ভুল বুঝতে পারে।

লেখক : আরিফ রব্বানী
ছাত্র, জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম,ঢাকা।

No comments:

Post a Comment

Pages