মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Tuesday, December 25, 2018

নির্বাচনে জনপ্রত্যাশা


বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে দেশে স্বাধিনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। পরাধীনতা ও পরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামলা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কালক্রমে সেই ঐক্যের দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একাধিক জোট থাকলেও বড় দল গুলোর মধ্যে ভেদাভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক ঘৃণার কারণে আশঙ্কাজনকভাবে রক্তারক্তি, সংঘাত-সংঘর্ষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একথাটি সর্বজন স্বীকৃত যে, ‘পারস্পরিক ঘৃণা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি জাতির জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না’। প্রতিহিংসার রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশ ও জাতীর কল্যাণে ঐক্যের বিকল্প নেই।

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
-----------------

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আবার এলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্টিত হবে ভোট গ্রহণ। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সাজে সেজেছে সারা দেশ। সকল দলের প্রার্থীরা প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন জনগণের সামনে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সামনে প্রকাশ করছে এবং নাগরিক প্রত্যাশার চমৎকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে। প্রিয় প্রতিনিধিকে অর্পন করবেন অন্যায়-অবিচার, খুন-গুম, ঘুষ-দুর্নীতি-দারিদ্র্যমুক্ত পরিচ্ছন্ন আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার গুরুদায়িত্ব। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আসন বিবেচনায় যে দলের প্রার্থীরা বেশী আসনে বিজয়ী হবেন সেই দল সরকার গঠন করবে।

ভোটের মাধ্যমে জনগণ প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য একজন প্রতিনিধিকে বেছে নেন। সরকারের প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন ভোটের মাধ্যমে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া আবার প্রয়োগ হয় বহু বেসরকারী সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও। ক্লাব বা সমিতি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও কর্পোরেশনেও ভোটের মাধ্যমে দায়িত্বশীল নির্বাচিত করা হয়।
ক্ষমতার রদবদল ও সংস্কার হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের হাতে অর্পন করা হয়; যারা কর্মদক্ষতার মধ্যদিয়ে যাবতীয় সংকট মোকাবেলা করে দেশকে নিয়ে যাবেন উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে। ধনী-দরিদ্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত সাবলম্বী করে তুলবেন। দুর্নীতির লাগাম টেনে খরবেন। দুরীভুত করবেন সকল অন্যায়-অবিচার, জুলুম-অত্যাচার। ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন।

জনপ্রতিনিধির কাছে জনগণের প্রত্যাশা একটু বেশী থাকে। তাই ভোটাররা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। আর নির্বাচিত ব্যক্তিকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, জনগণ আপনাকে ভালোবাসেন বলেই তাদের মুল্যবান আমানত আপনাকে অর্পণ করেছেন। আপনি যোগ্য বলেই আপনাকে এই গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ দান করেছেন। প্রত্যেক নাগরিকের সকল অধিকার আদায়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে আপনাকে প্রয়োজন বলেই জনগণ আপনাকে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং যাদের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন, তাদের এই আমানতের খেয়ানত করবেন না। নির্বাচনী ইশতেহার বা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে কোন রকম অবহেলা করা যাবে না। জনগণের সুধারণা ও ভালোবাসার অবমুল্যায়ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন। এই সুধারণা নিয়ে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য মোহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রত্যেক নাগরিকের কাছে ভোট হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত স্বরূপ। ভোটের মাধ্যমে সঠিক হকদারের কাছে এ আমানত পৌছে দেয়া হয়। আদর্শিক সমাজ, কল্যাণমুলক সংগঠন বা রাষ্ট্র গঠনের জন্য এ আমানত সৎ-যোগ্য ও কর্মট ব্যক্তির কাছে পৌছে দেয়া প্রতিটি নাগরিকের জন্য জরুরী।

নির্বাচনী পরিবেশকে বলা হয় ‘ভোট উৎসব’। আমরাও জানি তাই। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসব খুজে পাননি ভোটাররা। নিকট অতীতে অনুষ্টিত হওয়া কয়েকটি সিটি ও স্থানীয় নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতা ও বিভিন্ন দিক-বিবেচনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অত্যসন্ন নির্বাচনেও নেই প্রকৃত উৎসবের আমেজ। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতি ও নিরবতা কাজ করছে। মানুষের মনে অনেক ধরণের জল্পনা-কল্পনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হামলা, মামলা, ভাংচুর, রক্তারক্তি, সংঘাত-সংঘর্ষের খবরে শন্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশের জনপ্রত্যাশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন একাদিক স্থানে হামলা ভাংচুর সংঘর্ষ দেখে সাধারণ নাগরিকরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কী-না তা নিয়ে শঙ্কিত। অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, ভোট যদি উৎসবই হয়ে থাকে তাহলে এতো সহিংসতা কেন? পরিস্থিতি দেখে অনেকেই আশংকা করছেন নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপযোগী অশান্ত পরিবেশে সাধারণ মানুষের আস্থা, নির্ভরতা ও ভালোবাসার প্রতিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বীর সৈনিকেরা নির্বাচন পরিস্থিতিকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে মাঠে নেমেছেন। বরাবরই জাতির বীর সেনারা দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে নিবেদিতপ্রাণ। তারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কর্মদক্ষতার মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাপী সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। ইসি-সহ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বশীলদের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, দেশ ও জাতির কল্যাণে একটি শন্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিবেন।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে দেশে স্বাধিনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। পরাধীনতা ও পরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামলা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কালক্রমে সেই ঐক্যের দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একাধিক জোট থাকলেও বড় দল গুলোর মধ্যে ভেদাভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক ঘৃণার কারণে আশঙ্কাজনকভাবে রক্তারক্তি, সংঘাত-সংঘর্ষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একথাটি সর্বজন স্বীকৃত যে, ‘পারস্পরিক ঘৃণা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি জাতির জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না’। প্রতিহিংসার রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেশ ও জাতীর কল্যাণে ঐক্যের বিকল্প নেই।

আমাদের নেতা-নেত্রীরা রাজনৈতিক মতানৈক্য ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে যাবেন। দেশ ও জাতীর কল্যানে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করবেন এবং গড়ে তুলবেন খুন-গুম, ঘুষ-দুর্নীতি-দারিদ্র্যমুক্ত পরিচ্ছন্ন আধুনিক আলোকিত বাংলাদেশ।

----------------------------------------------------
মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
(নিবন্ধকার ও কলাম লেখক)
শিক্ষক : জামেয়া ইসলামিয়া আনওয়ারে মদিনা মাদরাসা, ইসলামপুর, সিলেট।

No comments:

Post a Comment

Pages