মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Thursday, December 27, 2018

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমাদের প্রত্যাশা

মানুষের দৃষ্টি এখন ত্রিশ তারিখের দিকে। সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় দেশবাসি। ভোট সেন্টারে গিয়ে নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারা হলো প্রত্যেকটি ভোটারের নাগরিক অধিকার। মানুষ আজ এই অধিকার নিয়ে শঙ্কিত। মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করা এবং সুষ্ট নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সুষ্ট ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় যায় এবং সরকার গঠন করে সে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে এবং সে দলই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমরা চাই না কোন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। জাতি জাল ভোট ও প্রহসনের নির্বাচন চায়না। আমরা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সরকারের প্রতি অনুরোধ করি যে, জাতি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে।
ওলীউর রহমান
--------------------------------------------
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন কারণে এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বত্র বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। তার সাথে শঙ্কাও। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী যে নির্বাচন হয়েছিল এতে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনে মানুষের আবেগ ও উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি অর্ধশত আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সরকারী দলের প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় তারা জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছিল। ২০০৮ থেকে তারা ছিল জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল। এর আগে তারা ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। গত দশ বছরে বিএনপির উপর দিয়ে অনেক দকল গেছে। দুর্নীতি ও সহিংসতা মামলায় কাবু দলের নেতা কর্মীরা। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার পথে বসার উপক্রম। দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া কারাবন্দি। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও একই কারণে দেশান্তরিত। বিগত দিনে ইলিয়াস আলী সহ তাদের অনেক নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধ মামালায় তাদের প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা মামলার ভার আর বইতে পারছেন না। হামলা মামলা আর গ্রেফতার আতংকে ঘরছাড়া বিএনপি নেতা কর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈকিত মিত্র জামায়াতে ইসলামির অবস্থা আরো বিপর্যস্থ। তাদের আমীর ও সেক্রেটারী জেনারেল সহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। আর অন্যদের ‘ছেড়ে দে মা কেদে বাচি’ অবস্থা। জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক আদালতে বাতিল হয়েগেছে। এক কথায় তারা বর্তমানে তাদের অস্থিত্ব সংকটের মুখোমুখি। সুতরাং বিএনপি জামায়াত এই নির্বাচনকে তাদের অস্থিত্ব রক্ষার টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে বিগত দশ বছরের হিসাব নিকাশ মিলিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও মহাজোট পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা হাত ছাড়া হলে বহু রকম বিপদের সম্মুখিন হতে হবে, তা ভাল করে অনুভব করতে পারছেন মহাজোটের নেতারা। বিগত দশ বছরে বিএনপি জামায়াত ও বিশ দল বা তেইশ দলীয় জোটের উপর যে মামলা-মোকাদ্দমা এবং দমন পীড়ন হয়েছে ক্ষমতা হাতছাড়া হলে এসবের প্রতিশোধ যে নেওয়া হবে না এর তো কোন নিশ্চয়তা নেই। সব কিছু মিলিয়ে আশা ও আশঙ্কার এই নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের অনুকুলে নেয়ার জন্য ঊভয় দল ও জোট মরিয়া।
বিভিন্ন স্থান থেকে প্রার্থীদের উপর হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক প্রার্থী নির্বিঘ্নে প্রচারনা চালাতে পারছেন না। পোস্টার ছেড়া হচ্ছে, কর্মীদের কে মারধর করা হচ্ছে। যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ এবং অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, নির্বাচনের আগেই যদি এই অবস্থা তো ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন কোন অবস্থা হবে? মানুষ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান চায়। মানুষ চায় একটি শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন।
রাজনৈতিক বিভক্তি ও প্রতিহিংসার কারণে গোটা জাতি আজ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে গোটা জাতি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে কিন্তু এই মতপার্থক্যের কারণে মানুষের মাঝে হিংসা বিদ্ধেষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কেন? কার স্বার্থে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে? এ প্রশ্ন সচেতন নাগরিকদের। রাজনীতি থেকে পরমতসহিষ্ণুতা, উদারতা, ভাবভক্তি একেবারেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। যেটুকু আছে তা টাকা ও সুযোগ সুবিধার লোভে এবং ক্ষমতার ভয়ে। এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে মুক্ত করা অপরিহার্য। জাতীয় রাজনীতিতে উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি, ড. কামাল হোসেন ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট পরস্পর মারমুখি অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী এবং নেতৃবৃন্দ বার বার অভিযোগ করছেন যে, তারা প্রচারনা চালাতে পারছেন না, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিরোধী জোট নির্বাচন বানচাল করার চেস্টা করছে। এ অবস্থায় দেশবাসি কারো কাছ থেকে কোন অভয় পাচ্ছে না। কে কত ভোট পাবে, কে পাশ করবে, কোন দল ক্ষমতায় যাবে বা কে ক্ষমতা হারাবে এদিকে মানুষের এখন দৃষ্টি আগ্রহ নেই। মানুষের দৃষ্টি এখন ত্রিশ তারিখের দিকে। সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় দেশবাসি। ভোট সেন্টারে গিয়ে নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারা হলো প্রত্যেকটি ভোটারের নাগরিক অধিকার। মানুষ আজ এই অধিকার নিয়ে শঙ্কিত। মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করা এবং সুষ্ট নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সুষ্ট ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় যায় এবং সরকার গঠন করে সে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে এবং সে দলই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমরা চাই না কোন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। মৃত মানুষ ভোট দিয়ে যাবে, ভোটার দেশের বাইরে অথচ তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে, আপনি সকালে ভোট সেন্টারে গিয়ে দেখলেন আপনার ভোট আপনি আসার আগেই দেওয়া হয়ে গেছে এসব আমরা দেখতে চাই না। জাতি জাল ভোট ও প্রহসনের নির্বাচন চায়না। আমরা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সরকারের প্রতি অনুরোধ করি যে, জাতি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে।
রাজনৈতিক দলসমূহকে সর্বাগ্রে একটি বিষয় পরিহার করতে হবে। আর সেটি হচ্ছে প্রতিহিংসা। আর একটি গুণ অর্জন করতে হবে। আর সেই গুণটি হচ্ছে উদারতা। এভাবে দেশ প্রেমের পরিচয় দিতে হবে। যে দল গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় যাবে প্রতিপক্ষ বা বিরোধী পক্ষকে প্রতিহিংসার পরিবর্তে মমত্ববোধ দিয়ে আপন করে নেয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে এবং যে দল কিংবা যে সকল প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হবেন তারা বিজয়ী প্রার্থীকে সাথে সাথে স্বাগত জানানোর মানসিকতা পোষণ করতে হবে। তাহলে নির্বাচন সুষ্ট হবে এবং আমরা হবো বিজয়ী। আর যদি তা করতে আমরা না পারি তাহলে আমরা আদর্শের সংগ্রামে হবো পরাজিত ও ব্যর্থ।

ওলীউর রহমান : কলাম লেখক, সিলেট।

No comments:

Post a Comment

Pages