মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Monday, January 7, 2019

ইহুদীবাদী আগ্রাসন রুখবে কে?

 রাষ্ট্রীয় শান্তি বিনষ্টকারী ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীরা রাসূল (সঃ) কর্তৃক মদীনা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা মুসলমানদেরকে এক নম্বর শত্রু হিসেবে দেখে। মদীনায় মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য যে কুটচাল তারা চেলেছে, আজ অবধি তারা সে কুটচালই চালিয়ে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় আজ আমেরিকার ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা মুসলিম নিধনের কাজ সারছে। এর শেষ পরিণতি কি আমরা জানিনা কিন্তুু তাবৎ বিশ্বের, বিশেষ করে মুসলিম ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের সকল রোষের শিকার হচ্ছে মার্কিনীরা এবং তাদের আমেরিকা। এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। পৃথিবীর যেখানেই কোন মানবতা ও গণতন্ত্র বিরোধী জুলুম আগ্রাসন সংঘটিত হচ্ছে, তার দায়ভার বিশ্বের মানুষ আমেরিকার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যুও এর ব্যাতিক্রম নয়। বিশ্বের মানুষ ইসরাইলী দখলদারিত্ব ও গণহত্যার জন্য আমেরিকাকেই দায়ী  করছে। বুশ কিংবা বারাক ওবামা অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলী আগ্রাসন প্রশ্নে তাদের নীতি এক ও অভিন্ন। যে কারনে সকলের সব রোষের শিকার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনীরাই। কিন্তু অন্তরালের নাটের গুরু ইহুদিবাদীরা থেকে যাচ্ছে নির্দোষ, নিষ্কলূষ। এরকম একটা বিশ্ব ব্যবস্থা জুইসরা চাচ্ছে এবং তা কার্যকরও করছে। অথচ দেখানো হচ্ছে, এ চাওয়াটা মার্কিনীদের। 
--------------------------------------------
সেলিম সামীর
--------------------------------------------
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল রাষ্ট্র। তারপর থেকে দখলদার ইসরাইল কর্তৃক নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর আগ্রাসন আর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চলে আসছে। প্রতিনিয়ত জেনেভা কনভেনশনসহ সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে তারা পদদলিত করছে। অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইহুদি সেটলাররা তাদের নতুন নতুন বসতি গড়ে চলেছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনের যতটুকু ভূখন্ড দখলমুক্ত ছিল, ২০১০ সাল পর্যন্ত সে ভূখন্ডের অধিকাংশই ইসরাইল দখল করে নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটে মাঠি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকালীন সাড়ে ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি ভূমিচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। বর্তমান সময়েও বসতি স্থাপন ও ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে আগ্রাসনবাদী ইসরাইল এর সেনাবাহিনী। গত কয়েক দশক ধরে চলা এ বর্বরতায় নিষ্পাপ শিশু ও নারী সহ লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা যেন বিধ্বস্ত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলী হামলা আর বর্বরতায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পবিত্র জেরুসালেমকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করার ঘোষনা দেন। এতে মুসলিম বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফিলিস্তিনিরাও নতুন করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারপরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তর করেন। এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিরা অব্যাহত বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালে ফিলিস্তিনের ‘ভূমি দিবস’ থেকে বিক্ষোভ আরও বেগবান হয়। দখলদার বিরোধী বিক্ষোভে ১৯৭৬ সালের ৩০শে মার্চ ৬ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। তারপর থেকে প্রতি ৩০শে মার্চ ‘ভূমি দিবস’ পালন করে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। ২০১৮ সালে ‘গ্রেট রিটার্ন অব মার্চ’ নামে ৩০ মার্চ থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ৭০ বছর পূর্বে জোরপূর্বক বিতাড়িত তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাঠির অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে তারা এই বিক্ষোভ করছেন। প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসুচি অব্যাহত রেখেছেন ফিলিস্তিনিরা। আলজাজিরার ১২ নভেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী গাজা স্ট্রিপে ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ইসরাইলী সেনার আঘাতে নারী-শিশুসহ ২১০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ভাবতে অবাক লাগে, একদিকে পৃথিবীর ৬০০ কোটিরও বেশি মানুষ আর অপরদিকে মুষ্টিমেয় ইহুদি জনগোষ্ঠী, সমগ্র পৃথিবী মিলিয়ে যাদের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ লক্ষের চেয়ে বেশি নয়। তাছাড়া শান্তিপ্রিয় সাধারণ ইহুদী যারা এই জায়নিস্ট বা ইহুদীবাদী তৎপরতাকে সমর্থন করেন না; তাদের সংখ্যাটা বাদ দিলে এই জায়নবাদী ইহুদী গোষ্ঠীর সংখ্যাটা একেবারে নগন্য। ইহুদীদের যে জনগোষ্ঠী জায়নবাদী চিন্তাধারার সমর্থক এবং বিশ্বব্যপি ইহুদীবাদী লবীর সাথে সক্রিয় তাদের এই ক্ষুদ্র সংখ্যাটা সামনে রেখে আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে সত্যিই অবাক হতে হয় যে, বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই আগ্রাসনবাদী জায়নিস্টরা কিভাবে পৃথিবীর সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের মতকে পদদলিত করতে পারে, পৃথিবীর মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ উপেক্ষা করে তারা তাদের দখলদারি আক্রমন চালিয়ে যেতে পারে। এত স্পর্ধা তারা কিভাবে দেখাতে পারে? তারা বার বার জাতিসংঘের আহব্বান ও মতামতকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল বহুবার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, অসংখ্যবার যুদ্ধ বেধেছে, অসংখ্যবার যুদ্ধ বিরতী হয়েছে। কিন্তু সংকট নিরসনের পরিবর্তে উত্তরোত্তর বেড়েছে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ ভাল করেই জানে যে, এ ধরনের শান্তিপ্রক্রিয়া সংকট থেকে উত্তরণের কোন স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এই যুদ্ধ পীড়িত ভূখন্ডের স্থিতি কবে আসবে? কবে তাদের মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব ফিরে পাবে, বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত একটি দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাড়াবে। বর্তমান বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকার সুপারম্যান ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ ফিলিস্তিন সংকটের কোন সমাধানের চেষ্ঠা না করে বরং সংকটকে আরও গভিরতার দিকে ঠেলে দিলেন কোন স্বার্থে? তিনি পরাশক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েও ইহুদিবাদীদের প্রতি এত দুর্বল কিংবা নতজানু হওয়ার কারন কি?
একটা বিষয় বিশ্ববাসির কাছে পরিস্কার হয়ে উঠেছে যে, আমরা বাহ্যিক ভাবে যে আমেরিকাকে দেখি তার ভিতরেও আরেক আমেরিকা আছে যার কন্ট্রোল ‘জুইস’ (ঔঊডঝ) বা ইহুদীবাদী লবীর হাতে। এই ইহুদীবাদী লবীই আজকের আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রন করছে। আজকের আমেরিকার রাজনীতি, অর্থনীতি, স্ট্রাটেজী, টেকনোলজি সবকিছুই এই জুইসদের কুক্ষিগত। আমেরিকান অর্থনীতিতে মাল্টিন্যাশনাল ও বড় বড় সব ইন্ডাস্ট্রী ও কোম্পানীগুলোর মালিকানা অথবা সংখ্যাগরিষ্ট শেয়ার ইহুদীদের দখলে। আজকের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সবগুলো জুইসরা তাদের মনোপলী করে রেখেছে। সিএনএন, রয়টার্স, এপি, এএফপি সহ মেইনস্ট্রিম সকল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোই বলা যায় তাদের দখলে। আর আমেরিকান অর্থনীতির এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ইহুদীদের করায়ত্তে থাকার কারণে আমেরিকার রাজনীতি, অর্থনীতি ইহুদী লবীর কাছে অসহায়। বিশেষ করে আমেরিকান গণতন্ত্র ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় তা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ইহুদী জনগোষ্ঠীর দানের মুখাপেক্ষী।
উন্নয়নশীল দেশে স্বার্থান্ধ মহাজনরা যেমন দরিদ্র কৃষকদের দাদন দেয় এবং ফসল উঠলে পানির দরে সিংহভাগ ফসল নিয়ে নেয়, তেমনি আমেরিকার ইহুদিবাদীরা নির্বাচন মওশুমে প্রার্থিদের ডোনেশন দেয় এবং তাদের নির্বাচনের সুফল কিনে ফেলে। যা তারা দেয় তার সহস্রগুণ সুবিধা তারা আদায় করে নেয়। ব্যয়বহুল গণতন্ত্রের এই রন্দ্রপথে সিন্দাবাদের ভূতের মত ইহুদীবাদীরা আমেরিকানদের ঘাড়ে চেপে বসেছে; তাদের স্বার্থের বাহন হয়ে পড়েছে মার্কিনীদের আমেরিকা। এর ফলশ্রæতিতে শুধু আমেরিকা নয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোরও ক্ষতি ডেকে আনছে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক নীতি এই ইহুদীবাদীদের নিজস্ব বিশ্বব্যবস্থা গঠনের নীল নকশারই ফল। নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দায় আলকায়দার উপর চাপালেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বিভিন্ন প্রমাণাদী থেকে এটা মানুষের কাছে পরিস্কার যে, টুইন টাওয়ার ট্রাজেডিতে নাটের গুরু ছিল এই ইহুদীবাদীরাই। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে মুসলিম জাতিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করাই ছিল তাদের মুল উদ্দেশ্য। টুইন টাওয়ার ট্রাজেডির পেক্ষাপটেই পরবর্তিতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের নামে হামলা করা হয়েছে আফগানিস্থান ও ইরাকে।
সন্ত্রাসবাদের সাথে পরবর্তীতে আরেকটি টার্ম যুক্ত হয় ‘জঙ্গিবাদ’। এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনের নামে সিরিয়া, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে আক্রমন, যুদ্ধমান অবস্থা ও সংকট তৈরীর পেছনে মুলতঃ নাইন ইলেভেন ট্রাজেডিই প্রেক্ষাপট হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে ‘আইএস’ নামক তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠিকে প্রতিরোধের নামে বিভিন্ন মুসলিম দেশে অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রাখা হচ্ছে। তথাকথিত এই ইসলামী জঙ্গিবাদ ইস্যুকে পূঁজি করে খোদ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে কৌশলগতভাবে ইসলামের বিপরীত অবস্থানে দাড় করানো হয়েছে। মুসলিম জাতিসত্বার চিন্তা চেতনা ও আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গির আমুল পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব দরবারে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদেরকে একটি ‘কমন এনিমি’ হিসেবে উপস্থাপন করতে তারা পুরোপুরিই সফল। আজকের পৃথিবীতে আমরা পরিবর্তিত যে বিশ্বরাজনীতি প্রত্যক্ষ করছি, এটিই ছিল নাইন ইলেভেন ট্রাজেডির মুল মটিভ।
রাষ্ট্রীয় শান্তি বিনষ্টকারী ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীরা রাসূল (সঃ) কর্তৃক মদীনা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা মুসলমানদেরকে এক নম্বর শত্রু হিসেবে দেখে। মদীনায় মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য যে কুটচাল তারা চেলেছে, আজ অবধি তারা সে কুটচালই চালিয়ে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় আজ আমেরিকার ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা মুসলিম নিধনের কাজ সারছে। এর শেষ পরিণতি কি আমরা জানিনা কিন্তুু তাবৎ বিশ্বের, বিশেষ করে মুসলিম ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের সকল রোষের শিকার হচ্ছে মার্কিনীরা এবং তাদের আমেরিকা। এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। পৃথিবীর যেখানেই কোন মানবতা ও গণতন্ত্র বিরোধী জুলুম আগ্রাসন সংঘটিত হচ্ছে, তার দায়ভার বিশ্বের মানুষ আমেরিকার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ফিলিস্তিন ইস্যুও এর ব্যাতিক্রম নয়। বিশ্বের মানুষ ইসরাইলী দখলদারিত্ব ও গণহত্যার জন্য আমেরিকাকেই দায়ী  করছে। বুশ কিংবা বারাক ওবামা অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলী আগ্রাসন প্রশ্নে তাদের নীতি এক ও অভিন্ন। যে কারনে সকলের সব রোষের শিকার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিনীরাই। কিন্তু অন্তরালের নাটের গুরু ইহুদিবাদীরা থেকে যাচ্ছে নির্দোষ, নিষ্কলূষ। এরকম একটা বিশ্ব ব্যবস্থা জুইসরা চাচ্ছে এবং তা কার্যকরও করছে। অথচ দেখানো হচ্ছে, এ চাওয়াটা মার্কিনীদের।
মুলতঃ মার্কিনীরা তাদের ফাউন্ডার ফার্দাসদের দেখানো পথ থেকে; তাদের প্রতিষ্ঠিত উদার গণতন্ত্র ও বিশ্ব ব্যবস্থা গঠনের স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। ফলে মার্কিনী গণতন্ত্র সাধারণ আমেরিকানদের দোরগোড়া থেকে ইহুদিবাদী বিলিয়নারদের ড্রয়িং রুমে চলে গেছে। টমাস জেফারনের বিখ্যাত একটা উক্তি হলো- ‘ঈশ্বরের শপথ, মানব মনের উপর সকল পীড়নের বিরুদ্ধে আমার চিরন্তণ সংগ্রাম।’ অথচ আজ টমাস জেফারসনের সেই আমেরিকা মানব মনের উপর উৎপীড়ন চালানোর সংগ্রামে বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আব্রাহাম লিংকন, যিনি গণতন্ত্রের স্রষ্টা, বলেছিলেন- দঅং ও ড়িঁষফ হড়ঃ নব ধ ংষধাব, ংড় ও ড়িঁষফ হড়ঃ নব সধংঃবৎ, ঃযরং বীঢ়ৎবংং সু রফবধ ড়ভ ফবসড়পৎধপু’ অর্থাৎ, ‘যেহেতু আমি কৃতদাস হতে চাই না, সে কারণে আমি মনিবও হতে চাই না। গণতন্ত্র সম্পর্কে এটাই আমার ধারণার প্রকাশ।’ কিন্তু আজকের বাস্থবতা হলো, গণতন্ত্রের ঝান্ডাবাহী আমেরিকাই আজ বিশ্বের মনিব হয়ে দাড়িয়েছে আর থার্ড ওয়ার্ল্ড তথা তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল, উন্নয়নশীল দেশ এবং সে দেশগুলোর মানুষ তার গোলামে পরিণত হয়েছে। যে আমেরিকার ফাউন্ডার ফার্দাসরা পৃথিবীর জাতিসমূহের সার্বভৌম মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা এবং জাতিসমূহের সমতা ও সহযোগিতা ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন তারা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি যে তাদের প্রিয় আমেরিকাই জাতি সমূহের সাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের নেতৃত্ব দেবে। যে বিশ্ব ব্যবস্থা গঠনে জাতিসংঘ হওয়ার কথা ছিল সত্যিকারার্থে ‘এ্যাসোসিয়েশন অব স্টেটস’, সেই জাতিসংঘ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে জাতিসমূহের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরশক্তি ইত্যাদি ধ্বংসের বরকন্দাজ হিসেবে কাজ করছে। আর তার মূলে আমেরিকার মাথায় জেঁকে বসা জুইসরাই এ সবের কলকাঠি নাড়ছে।
সুতরাং বাস্তবতা হল, ফিলিস্তিন সমস্যার কার্যকর সমাধানে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা কিংবা জাতিসংঘের বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ কস্মিনকালেও আশা করা যায় না। বিশেষ করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে আমেরিকা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল, সে আমেরিকার কাছ থেকে এমন আশা করা চরম বোকামী হবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম মিল্লাতকেই ঐকবদ্ধ হতে হবে। মুসলিম বিশ্বকে একই প্লাটফরমে এসে কার্যকর কৌশল গ্রহন করতে হবে। এটা শুধু মানবাধিকার কিংবা ফিলিস্তিনিদের স্বাধিকারের প্রশ্ন নয়, জেরুসালেম মুসলিম জাতির ঐতিহ্য ও ধর্মিয় ভাবাবেগের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওখানেই অবস্থিত মুসলমানদের প্রথম কিবলা পবিত্র ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদুল আক্বসা’। এই পবিত্র শহর জেরুসালেম কখনও ইহুদিদের দখলে ছিল, কখনও খ্রিষ্টানদের দখলে, কখনও মুসলমানদের হাতে। ইতিহাস স্বাক্ষী, মুসলমানরা যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে কিংবা ঔপনিবেশ বসিয়ে এ শহর দখল করেনি; ইসলামের আদর্শ জয় করে নিয়েছিল জেরুসালেমের অধিবাসীদেরকে। জেরুসালেমের সে সময়ের অধিবাসীগন ইসলামের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে নিয়েছিলেন এবং শহরের শাষন ক্ষমতা ইসলামী খেলাফতের হাতে অর্পন করেছিলেন। এই ভূমির পুনরুদ্ধারের জন্যই সুলতান ‘গাজি সালাহউদ্দিন আয়ুবী’ জীবনের সিংহভাগ সময় ব্যায় করেছেন এবং ‘ক্রুসেড’ যুদ্ধ জয় করে এ পবিত্র ভূমিকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত মুসলিমদের এই ভূমি এবং পবিত্র ‘আকসা’ আজ ইহুদিবাদীদের দখলে। তাই আজ ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের জন্য, ফিলিস্তিনিদের স্বাধিকারের জন্য, সর্বোপরি এই পবিত্র শহর ‘জেরুসালেম’, পবিত্র ঘর ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’কে মুক্ত করার জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। জোরালো কুটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে। অমুসলিম রাষ্ট্রসমুহের সমর্থন আদায় করে নিতে হবে।

লেখক: সেলিম সামীর
প্রবন্ধকার ও কলামিস্ট
email: shelim.sameer@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Pages