মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Tuesday, June 15, 2021

আপনি কি ‘দাইয়ুস’ এর সংজ্ঞায় পড়ে যাচ্ছেন?

 


ভেবে দেখবেন, কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যমতে আপনি কি দাইয়ুসের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন?

 

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ

-----------------------------------


পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নিজের পরিবার-পরিজন ও অধীনস্থদেরকে যাবতীয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা অন্যায় পাপাচার এবং বে-পর্দা চলাফেরা করা থেকে বিরত রাখার জন্য তাগিদ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্ছারিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের সমাজ একেবারেই উদাসীন। যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-কন্যা সহ পরিবারের অধিনস্ত অন্য সদস্যদের বেপর্দা চলাফেরা ও অশ্লীল কাজকর্ম বা ব্যভিচারকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে অথবা কোনোরূপ বাধা না দিয়ে নিরবতা পালন করে হাদিস শরীফে তাকে ‘দাইয়ুস’ বলা হয়েছে।


‘দাইয়ুস’ একটি আরবি পরিভাষা। যার দ্বারা এমন পুরুষকে বোঝায়, যে তার আত্মীয়-স্বজন বা দাম্পত্য সঙ্গীর আশালীন আচরণের ব্যাপারে সহনশীল। ইংরেজিতে ‘দাইয়ুস’ এর পারিভাষিক শব্দ হল cuckold বা wittold (অসৎপতি)। যে তার নিজ পরিবারে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে শিথিলতা প্রদর্শন করে, স্ত্রী-কন্যাদেরকে পর্দার আদেশ করে না, পর্দাপালনে উৎসাহিতও করে না, এমনকি শরীয়াহ বিরোধী অশ্লীলতাকে মেনে নেয়Ñ সে ব্যক্তি ‘দাইয়ুস’।


রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।’ দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল (সাঃ) বলেন, “তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যেতে পারবে না, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী/নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি এবং দাইয়ুস।” (আহমাদ ২/৬৯,১২৮, সুনানে নাসাযয়ি ২৫৬২, মিশকাতুল মাসাবিহ ৩৬৫৫, মুসতাদরাকে হাকেম ২২৬)।


অন্য এক হাদিসে রাসূলু (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্তের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। অতঃপর দেশের শাসক জনগণের উপর দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের উপর দায়িত্বশীলা। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল। সেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্তের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারী- ৮৯৩, মুসলিম- ১৮২৯)


এ প্রসঙ্গে করআনে কারীমে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’ (সূরা নুর, আয়াতঃ ১৯)।


সুরায়ে তাহরিমে ৬নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসী বান্দাগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুণ থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা তা-ই করে যা করতে তাদের আদেশ করা হয়।’


এসব আয়াত ও হাদীসে স্পষ্ট যে, দাইয়ুসের পরিণতি ভয়াবহ। “মহান আল্লাহ তাআলা আদেশ করে দিলেন, বান্দা যেন নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচায়। তাই সাধারণভাবে সমস্ত অধীনস্থদেরকে এবং বিশেষভাবে পরিবার-পরিজনদেরকে যাবতীয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা-অন্যায়-পাপাচার এবং বে-পর্দা চলাফেরা করা থেকে বিরত রাখা এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্ঠা করা অপরিহার্য।


আজকের সমাজব্যবস্থা এব্যাপারে মারাত্মক উদাসীন। নিজের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে তথা অধিনস্তরা বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যায়? কি করে? কেমন পোশাক পরে? তথ্যপ্রজুক্তির যুগে স্মার্টফোন, লেপটপ ইত্যাদির মাধ্যমে সে কি করছে? এসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়ার দরকারও মনে করেন না অনেক অভিভাবক। ফলে নিজের স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত হয়। ছেলে-মেয়ে অন্য ছেলে-মেয়ের সাথে প্রেমের জালে আবদ্ধ হয়ে কুকর্মে লিপ্ত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে পারিবারিক অশান্তি ও কলহ সৃষ্টি হয়। প্রেম ও পরকিয়ার জেরে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন আর বিযের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনাতো অহরহ ঘটেই চলেছে। এমনসব সংবাদ আমরা প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই। তবুও আমরা নিজের পরিবার পরিজন তথা অধিনস্তদের ব্যাপারে সচেতন হই না। তাদেরকে অশ্লিলতা ও বেহায়াপনার কাজে বাধা দেই না। রবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরো উৎসাহিত করা হয়। এমনকি নিজের স্ত্রী-কন্যা সহ অধিনস্তদেরকে আপত্তিকর সাজে সজ্জিত করে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন রকম আকর্ষণীয় ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিশ করতেও দেখা যায়।


নিজের স্ত্রী-কন্যা সহ অধিনস্তদের নিয়ে কোথায়ও ঘুরতে গেছেন, এটা ভালো কথা। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা সোয়াবের কাজও। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, আপনার স্ত্রী আন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে কী-না। সে কেমন পোশাক পরিধান করেছে। যেসব পোশাক পরিধান করলে অনিচ্ছাসত্বেও অন্য পুরুষ আপনার স্ত্রী বা অধিনস্তদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়- এমনসব পোশাক পরিধান করা থেকে তাদেরকে বারণ করা উচিত। কিন্তু তা না করে উল্টো বিভিন্ন পার্টি বা বিনোদন পার্কে নিজের স্ত্রী-কন্যা সহ অধিনস্তদেরকে এমনভাবে নিয়ে যেতে দেখা যায়- যাতে অন্যরা লুলোপ দৃষ্টিতে তাকায়। এমনকি স্মার্টফোনের ক্যমেরায় দৃষ্টিনন্দন ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেন। এসব ছবি ফেইসবুকে দেখামাত্র শত শত ভাই বন্ধুরা ‘কিউট ভাবী’, ‘সো সুইট’ ইত্যাদি নানা রকম আকর্ষণীয় মন্তব্য করেন। আর আপনি মুচকি হেসে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন আর মনে মনে বলছেন- আমার বউ সেইরাম সুন্দরী।


আপনি কি জানেন, এতে আপনি কি পরিমাণ গোনাহগার হচ্ছেন এবং অন্যদেরকে কি পরিমাণ গোনাহগার বানাচ্ছেন? কুরআন হাদিসে বলা হয়েছে, আপনার পরিবার পরিজনসহ অধিনস্তদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্ঠা করতে অথচ আপনি নিজে গোনাহগার হচ্ছেন এবং অন্যদেরকেও গোনাহগার বানাচ্ছেন। ভেবে দেখবেন, কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যমতে আপনি কি দাইয়ুসের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন?


লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট


No comments:

Post a Comment

Pages