মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Monday, July 10, 2023

জানান দিতে হবে তো


যেখানে আমাদের শহর গুলোতে অ্যামুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে ব্যাক্তিগত গাড়ি চলে সেখানে বিস্ময় বিস্মিত হবেনা তো কি হবে!




মোঃ আব্দুল বাসিত

-----------------------------------


লোকটি রাস্তার পাশে টংয়ে দাড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ কোন এক বিকট শব্দে কেপেঁ উঠলেন। কাপ হাত থেকে না পড়লেও চা কয়েক ফোঁটা ঠিকই পড়লো! পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলেন একটি মোটরসাইকেল শাঁই করে চলে গেল। সামনে- পেছনে আর কোন গড়িই নেই। দুই চাকার বাহনে ট্রাকের হর্ণ! লোকটি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কাছেই ছিলাম। বললাম- "জানান দিতে হবে তো।" লোকটি বললেন, বিস্ময়ের ব্যাপার নয় কি? বললাম, আজ কাল বাইকওয়ালাদের যা আচরণ তাতে বিস্ময় নিজেই বিস্মিত।


যেখানে আমাদের শহর গুলোতে অ্যামুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে ব্যাক্তিগত গাড়ি চলে সেখানে বিস্ময় বিস্মিত হবেনা তো কি হবে!


কোন গাড়ীতে কী হর্ণ ব্যবহার হবে তার নির্দিষ্ট কোন আইন হয়তো নেই। তবে যে গাড়ীতে যে হর্ণ ফিট করা থাকে সেটা ব্যাবহারেরই পরামর্শ- দিয়ে থাকে বিশেষজ্ঞ মহল। সাধারণত ছোট ও হালকা গাড়ী গুলোতে অপেক্ষাকৃত কম ডেসিবেলযুক্ত হর্ণ থাকে। সেডান গাড়ি গুলোতে যে হর্ণ ব্যবহার হয় তা অনেকক্ষণ ধরে শব্দ উৎপাদন করে যা দূরের রাস্তায় কার্যকর কিন্তু শহরের মধ্যে তা শ্রবনকারীর জন্য কষ্টকর।


যত্রতত্র অপরিকল্পিত হর্ন বাজানো শহরেই বেশী- যা আজকাল আমাদের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। শহরের সর্বত্র, সকাল- থেকে সন্ধ্যা, রাত- মধ্যরাত কোন ব্যাপারই না, রাস্তার আশ-পাশে, পয়েন্ট দাঁড়নো বা হেটে চলা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফোনে কথা বলা তো দূরে থাক, সামনা- সামনি কথা বলাই দুরূহ হয়ে উঠছে। শহরের অলি-গলিতে অনেকগুলো মটরসাইকেল একসাথে প্রকটভাবে হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলা নিত্ত- নৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে। হর্ণের শব্দ শুধু কানে নয়- মস্তিষ্কে আঘাত করছে  যেন তারা জানান দিচ্ছেন তাদের মোটরসাইকেল আছে। তারা রাইডিং করছেন। পথচারি বধির হয়ে যাক তাতে কার কী!


সধারণত একজন সুস্থ মানুষ ২০ ডেসিবেল এর শব্দ শুনতে পারে মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেল পর্যন্ত। এমন অনেক হর্ন আছে যা ৬০ থেকে ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ উৎপন্ন করে।

সাধারণত ৬০ ডেসিবেলের শব্দ মানুষের জন্য সাময়িকভাবে বধিরতার সৃষ্টি করে। ১০০ ডেসিবেলের শব্দ স্থায়ীভাবে বধিরতার সৃষ্টি করতে পারে, তাই এ ধরনের হর্ণ- শব্দ দুষন তো বটেই মানুষের স্বাস্থ্যহানিরও অন্যতম কারন।


বিকট শদ সুস্থ্য মানুষের জন্য তো বটেই- শিশু, শিক্ষার্থী ও রোগীদের জন্য ভয়ানক। এর কারনে মানুষ বধিরতার রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হঠাৎ বিকট শব্দ মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট করে। মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি করে। যা মানসিক রোগের কারন হতে পারে। মেজাজ খিটখিটে হয়। ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাধাগ্রস্ত হয়, যা তাদের লেখাপড়ায় উদাসীন করে তুলে। দেখা দেয় মানসিক চাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ।


আমাদের দেশে, যানজট হর্ণের একটি বড় কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই যানজট কমানো হর্ণ নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হর্ন নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক পুলিশেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। অযথা হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে হবে। জরিমানা করতে হবে। যে গড়ীতে যে হর্ন মনানসই সে গাড়িতে সেই হর্ন ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে চালকদের পাশাপাশি গাড়ির মালিককেও সচেতন হতে হবে।


আসুন শব্দ দুষণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোদে নিয়ম মেনে যথাস্থানে হর্ন- বাজাই, যত্রতত্র হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকি। হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ করি। মানুষের ক্ষতি হয়, এমন হর্ন ব্যাবহার বন্ধ হওয়া উচিৎ। মানানসই হর্ণ ব্যবহার ও বাজানো অন্য গাড়ি থেকে শুরু করে সড়ক ও মানুষ সকলের জন্য সুখকর হবে।

 

লেখক : মো: আব্দুল বাসিত

পোষ্টাল অপারেটর, evsjv‡`k WvK বিভাগ, সিলেট 



No comments:

Post a Comment

Pages