মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Saturday, January 19, 2019

বিভেদের নব্য সংস্করণ আলমী শূরা ও এতাআত

শুরু থেকেই তাবলীগ জামাতের সার্বিক তত্তাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে দারুল উলুম দেওবন্দ। বিভিন্ন মহল থেকে তাবলীগ জামাতের উপর যত প্রশ্ন এবং অভিযোগ এসেছে এসবের কুরআন হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে জবাব দিয়ে বই-পুস্তক রচনা করেছেন দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম। এমনকি তাবলীগ জামাতে যত কিতাবাদির তা’লিম দেওয়া হয় সবগুলো কিতাবই রচনা করেছেন এই দারুল উলুম দেওবন্দের উলামাগণই। এভাবে সারা বিশ্বে তাবলীগ জামাতের গুরুত্ব ও বৈধতা মুসলমানদের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন এই দেওবন্দ সিলসিলা তথা কওমী ধারার উলামায়ে কেরামগণ। এছাড়া তাবলীগ জামাতের অধিকাংশ শীর্ষ মুরব্বী ও দায়িত্বশীলগণ দারুল উলুম দেওবন্দ পড়ুয়া এবং এই ধারার আলেম উলামাদের কাছ থেকে শিক্ষা এবং দীক্ষা প্রাপ্ত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো যে, আজ তাবলীগ জামাতকে দারুল উলুম দেওবন্দ তথা হক্কানী উলামায়ে কেরামের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। 
ওলীউর রহমান
-----------------------------------
নানা রকম বিভেদ, বিদ্ধেষ ও বিতর্কে জর্জড়িত, বিপর্যস্ত, ক্ষত-বিক্ষত ও বহুধাবিভক্ত মুসলিম উম্মাহ। বিতর্ক ও বিভক্তি যেন পিছু ছাড়ছেনা উম্মাহর। বিশ্বের সোয়াশ কোটি মুসলমানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ কলহের কারণেই আজ মুসলমানগণ তাগুতী শক্তির হাসি-তামাশার পাত্র হয়েছে। অতীতে আমরা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যত বিভেদ এবং বিতর্ক প্রত্যক্ষ করেছি এর সাথে যুক্ত হলো এক ভিন্নধর্মী ও নব্য বিভেদ। আশংকা করা হচ্ছে যে, অতীতের সকল বিতর্কের চেয়ে এই বিতর্ক হবে বিপদজনক এবং মুসলিম সমাজের জন্য বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর। এই বিতর্কের মূল উৎস হলো মুসলিম জাহানে বহুল পরিচিত ও সমাদৃত দাওয়াতী আন্দোলন ‘তাবলীগ জামাত’ এর বর্তমান আমীর মাওলানা সা’দ এর কতিপয় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এবং বিতর্কিত ভূমিকা।
মাওলানা সা’দ তাবলীগ জামাতের শূরায়ী পদ্ধতি পরিহার করে নিজেকে আমীর ঘোষণা করেন এবং এর পাশাপাশি তার বক্তব্যে ইসলামের ভূল ব্যাখ্যা করেন। তার এ ভূমিকার কারণে নিজামুদ্দিন মারকায সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাবলীগ অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে। তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী পাকিস্তানের আহমদ লাট, মাওলানা হাজী আব্দুল ওহ্হাব (রহ), মাওলানা তারেক জামিল, ভারতের মাওলানা ইবরাহীম দেওলা, মাওলানা ইয়াকুব সহ নিজামুদ্দিন মারকাযের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বীগণ মারকাজ ছেড়ে চলে যান। সারা বিশ্বের তাবলীগ অনুসারীরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পক্ষ বর্তমান আমীরের সমস্ত কার্যকলাপের বিপক্ষে এবং ‘আলমী শূরা’ অর্থাৎ পরামর্শের মাধ্যমে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের কাজ পরিচালনার পক্ষে আর অন্য একটি পক্ষ ‘এতাআত’ অর্থাৎ মাওলানা সা’দ এর আনুগত্যের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়।
তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মাওলানা ইলিয়াস দেহলবী (রহ.)। তিনি ভারতের ঐতিহাসিক দেওবন্দ মাদরাসা থেকে শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দীর (রহ.) এর কাছে হাদীসের অধ্যয়ণ শেষ করে মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) ও মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.) এর কাছে আধ্যাত্মিক দীক্ষা ও খেলাফতী লাভ করে উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের চরম এক দুঃসময়ে ১৯১০ সালে ভারতের রাজস্থান মেওয়াতে তাবলীগ আন্দোলন এবং তাবলীগ জামাতের গোড়াপত্তন করেন। এ কাজে তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের যে কর্মনীতি প্রণয়ন করেছিলেন তা সর্বপ্রথম তৎকালীন যুগশ্রেষ্ট আলেম শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান, মাওলানা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী, সহ দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমদের কাছে পেশ করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের উলামায়ে কেরামগণ অনেক চিন্তা ফিকির করে এসব নীতিমালার মধ্যে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) কে এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ১৯২০ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) দিল্লিতে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ইন্তেকালের পর তাবলীগ জামাতের আমীররের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারই সুযোগ্য সন্তান মাওলানা ইউসুফ (রহ.) কে। মাওলানা ইউসুফের ইন্তেকালের পর আমীরের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)কে।
শুরু থেকেই তাবলীগ জামাতের সার্বিক তত্তাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে দারুল উলুম দেওবন্দ। বিভিন্ন মহল থেকে তাবলীগ জামাতের উপর যত প্রশ্ন এবং অভিযোগ এসেছে এসবের কুরআন হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে জবাব দিয়ে বই-পুস্তক রচনা করেছেন দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম। এমনকি তাবলীগ জামাতে যত কিতাবাদির তা’লিম দেওয়া হয় সবগুলো কিতাবই রচনা করেছেন এই দারুল উলুম দেওবন্দের উলামাগণই। এভাবে সারা বিশ্বে তাবলীগ জামাতের গুরুত্ব ও বৈধতা মুসলমানদের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন এই দেওবন্দ সিলসিলা তথা কওমী ধারার উলামায়ে কেরামগণ। এছাড়া তাবলীগ জামাতের অধিকাংশ শীর্ষ মুরব্বী ও দায়িত্বশীলগণ দারুল উলুম দেওবন্দ পড়–য়া এবং এই ধারার আলেম উলামাদের কাছ থেকে শিক্ষা এবং দীক্ষা প্রাপ্ত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো যে, আজ তাবলীগ জামাতকে দারুল উলুম দেওবন্দ তথা হক্কানী উলামায়ে কেরামের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।
তাবলীগ জামাতের চলমান সংকট এবং বিভেদ যদিও বিগত প্রায় দুই বছর থেকে বাংলাদেশে প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে কিন্তু এই সংকটের বিষাক্ত বীজ বপন করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে। তাবলীগ জামাতের তৃতীয় আমীর হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) তার ইন্তেকালের পূর্বে সারা বিশ্বে তাবলীগের কাজের ব্যাপকতা অনুভব করে দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘আলমী শূরা’ (আর্ন্তজাতিক পরিচালনা কমিটি) গঠন করেন। যাতে এই শূরা সদস্যরা পরামর্শের ভিত্তিতে সারা বিশ্বের তাবলীগ জামাতের কাজ পরিচালনা করেন। এই শূরা কমিটিতে তিনি তিনটি রাষ্ট্রের তাবলীগের উচ্চপর্যায়েযর দায়িত্বশীলদের অর্ন্তভূক্ত করেন। হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) ১৯৯৫ সালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর এই আলমী শূরা বা আর্ন্তজাতিক পরিচালনা পরিষদ তাবলীগ জামাতের প্রধান মারকাজ নিজামুদ্দিন এর পরিচালনার জন্য প্রথমে ৩ সদস্য এবং পরে ১৯৯৬ সালে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি শূরা কমিটি গঠন করে দেন। এই শূরা সদস্যরা হলেন- ১. মাওলানা ইযহারুল হাসান, ২. মাওলানা উমর পালনপুরী, ৩. মাওলানা যুবায়রুল হাসান, ৪. মিয়াজি মেহরাব ও ৫. মুহাম্মদ সা’দ। এই শুরা সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ‘শুরা মজলিসে’  সিদ্ধান্ত দানকারী মনোনীত হতেন। এই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সর্বকনিষ্ট সদস্য ছিলেন মুহাম্মদ সা’দ। আর এই সা’দ হলেন তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবী (রহ.) এর নাতি মাওলানা হারুন (রহ.) এর ছেলে। ইলিয়াস (রহ.) এর পরিবার তাবলীগ অনুসারীদের কাছে একটি সম্মানিত পরিবার।
তাবলীগ জামাতের চলমান সংকটের উপর রচিত বিভিন্ন বই পুস্তক ও প্রবন্ধ-নিবন্ধের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় যে, মুহাম্মদ সা’দকে যখন নিজামুদ্দিন মারকাজের ৫ সদস্য বিশিষ্ট শূরা কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করা হয় তখন তার বয়স ছিল ত্রিশের ভিতরে। তখনো তিনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষার সনদ গ্রহণ করেন নাই এবং তাবলীগ জামাতেও তিনি সময় লাগান নাই, এমনকি শূরা সদস্য মনোনীত হওয়ার পরও তাবলীগ জামাতে সময় লাগানো জরুরী মনে করেন নাই। হয়ত কেবল বংশের সম্মানার্থে তাকে এই শূরায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া এই উঁচু পর্যায়ের শূরা কমিটিতে তাকে অন্তর্ভূক্ত করার কোন যোগ্যতাই তার মধ্যে ছিলনা। আর এখান থেকেই তাবলীগ জামাতকে ধংসকারী চলমান বিভেদ, বিদ্ধেষ ও সংকটের মূল উৎপত্তি।
মাওলানা সা’দ কান্ধলবী শূরা সদস্য হওয়ার পরই বিভিন্ন ইজতেমায় তাকে প্রধান্য দেওয়ার আবদার শুরু করেন। অথচ এটা ছিল তাবলীগ জামাতে নিষিদ্ধ এবং অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ। নিজামুদ্দিন মারকাজের শূরা সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং মারকাজের পরিচালক মাওলানা উযহারুল হাসান ১৯৯৬ সালে ইন্তেকালের পর মারকাজের পরিচালক মনোনীত হন মাওলানা সা’দ। নিজামুদ্দিন মারকাজের মাদরাসায়ে কাশিফুল উলুমের মজলিসে আমেলা সদস্য ও মারকাজের শীর্ষ মুরব্বী চৌধুরী আমানত উল্লাহ তার এক বইয়ে লিখেছেন, মাওলানা সা’দ মারকাজের নাজিম মনোনীত হওয়ার পর ধীরে ধীরে মারকাজের অর্থ বিভাগ সহ প্রতিটি শাখার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালে মাওলানা উমর পালনপুরী এবং ১৯৯৮ সালে মিয়াজী মেহরাব ইন্তেকাল করেন। এভাবে পাঁচ সদস্যের মধ্যে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনজনই ইন্তেকাল করেন। অবশিষ্ট থাকেন শুধু মাত্র মাওলানা সা’দ এবং মাওলানা যুবায়রুল হাসান। শূরা কমিটির শূণ্য পদগুলো পুরণ করার জন্য বার বার মাওলানা সা’দের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি কোন পাত্তা দেন নাই। বরং তিনি তার বংশীয় ও আঞ্চলিক প্রভাব খাটিয়ে মারকাজের সর্বত্র তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় অন্য দায়িত্বশীল এবং মুরব্বীগণ একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাবলীগ জামাতের অতীত ঐতিহ্য ও মর্যাদার দিকে লক্ষ্য করে কেউই কথা বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না আবার মাওলানা সা’দের এসব কার্যকলাপ মেনে নিতেও পারছিলেন না। এভাবে মাওলানা সা’দের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে মনগড়া বক্তব্য দিতেও শুরু করেন। তার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যসমূহের মধ্যে কিছু বক্তব্য হলো যেমন- ১. হযরত মুছা (আ.) তুর পাহাড়ে গিয়ে ভূল করেছেন, ২. হেদায়তের দায়িত্ব কেবল আল্লাহর হাতে নয় নবী (সা.) এর হাতেও, ৩. ইসলামী শিক্ষা দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা হারাম। এরকম প্রায় শতাধিক বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য তিনি দিতে থাকেন যা সম্পূর্ণ কোরআন হাদীস পরিপন্থী এবং তার এইসব মনগড়া চিন্তা ধারা তার অনুসারীদের মধ্যে ও ছড়িয়ে পড়ে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে মাওলানা যুবায়রুল হাসান ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর মাওলানা সা’দ নিজেকে আমীর ঘোষণা করে বসেন। মারকাজে এবং মারকাজের বাইরে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বী ও জিম্মাদারগণ মাওলানা সা’দকে তার এসব বিতর্কিত কার্যকলাপ ও বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য বার বার সতর্ক করতে থাকেন এবং বুঝাতে থাকেন। কিন্তু তিনি তার গতিতেই চলতে থাকেন। অবশেষে হতাশ হয়ে একে একে মারকাজ ছেড়ে চলে যান তাবলীগের প্রবীণ মুরব্বীগণ এবং ঝড়ের বেগে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে মাওলানা সা’দের পক্ষ্যে বিপক্ষ্যে বিভক্তি এবং বিদ্ধেষ। ২০১৫ সালের ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় জিম্মাদারগণ যখন মাওলানা সা’দকে প্রশ্ন করেন যে, আপনিকি নিজেকে আমীর দাবি করেন? প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও পরে তা স্বীকার করেন। এর পর এখান থেকেই বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বীগণ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট ’আলমী শূরা’ কমিটি এবং ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিজামুদ্দিন মারকাজ কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু এই কমিটিকে ও আমলে নেননি মাওলানা সা’দ। এভাবে তার নেতৃত্বের লোভ এবং বিভ্রান্তিকর ও মুর্খতাপূর্ণ বক্তব্যের কারণে আজ প্রায় এক শতাব্দির তাবলীগ জামাত ধ্বংসের ধারপ্রান্তে।
অন্য দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশ্ন আসতে থাকে দারুল উলুম দেওবন্দে মাওলানা সা’দের বিতর্কিত বক্তব্য সমূহ সম্পর্কে। দারুল উলুম দেওবন্দ ও বার বার তাকে সতর্কতার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেয়। এতেও মাওলানা সা’দের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে নাই। অবশেষে দারুল উলুম দেওবন্দ তার বক্তব্য প্রকাশ করে যে, ‘তাবলীগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এতে আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই, তবে মাওলানা সা’দের বিতর্কিত ও কোরআন সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য সমূহ তাকে অবশ্যই প্রত্যাহার (রুজু) করতে হবে।’ গত ডিসেম্বর (২০১৮) মাসের শেষের দিকে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা সচিব মাওলানা আফজাল হোসাইন কাইমুরী বাংলাদেশে সফরে আসলে বিভিন্ন স্থানে তাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাওলানা সা’দ চিন্তাগত বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন, তার একশত আশিটির মত বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের রেকর্ড দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে আছে। দারুল উলুম আশংকা করছে তিনি কোন নতুন মতবাদের সৃষ্টি করছেন কি না। আপনারা মানুষকে সচেতন করতে থাকেন, যাতে লোকেরা তার বিভ্রান্তির শিকার না হয়।’
তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের প্রধান মারকাজ হলো ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। প্রথম থেকেই মাওলানা সা’দ কেন্দ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছিলেন বাংলাদেশের আলেম উলামা এবং তাবলীগ জামাতের মুরব্বীগণ। ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার পূর্বে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল কাকরাইল মারকাজের শীর্ষ মুরব্বীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মাওলানা সা’দ কেন্দ্রিক বিভেদ যাতে বাংলাদেশের তাবলীগ অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে এজন্য তারা কিছু পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো ছিলো এই মর্মে যে, ‘মাওলানা সা’দকে যেন বিশ্ব ইজতেমায় দাওয়াত না করা হয়। আর যদি তাকে দাওয়াত করতেই হয় তাহলে তিনি তার বিতর্কিত বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিজামুদ্দিন মারকাজের বিভক্তি মিটিয়ে উভয় পক্ষই আসতে হবে। কারণ যেভাবে আমরা মাওলানা সা’দের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মেনে নিতে পারি না অনুরূপ আমরা তাবলীগ জামাতের বিভক্তিও দেখতে চাইনা।’ কাকরাইলের শুরা সদস্যরা এইসব কথার সাথে একমত হলেও পরবর্তীতে দু’ একজন শূরা সদস্যের যোগশাজসে মাওলানা সা’দকে বিশ্বইজতেমায় দাওয়াত করা হয় এবং তিনি ইজতেমায় অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। কিন্তু সেদিন ঢাকার রাজপথগুলোতে তার বিরূদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তার বিপক্ষের লোকেরা। যার কারণে তিনি ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করেই ফেরত যেতে হয়। বর্তমানে তাবলীগ জামাতের বিভেদ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত ০১ ডিসেম্বরের টঙ্গীর ময়দানের সংঘর্ষ বিভেদের আগুনে পেট্রোল ঢেলেছে। বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের কাজ এখন প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে, দাওয়াতের পরিবর্তে এখন দোষচর্চাই বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে, মাওলানা সা’দ তাবলীগের মেহনতকে ধ্বংস করার কোন গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছেন। আর না হয় তার কারণে আজ তাবলীগ জামাত ধ্বংসের পথযাত্রী। কিন্তু তিনি তার পদে বহাল তবিয়তে আছেন এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। অথচ তিনি বৃহত্তর স্বার্থে তার পদ থেকে সরেগেলে সহজেই এই সংকটের সমাধান হয়ে যেত।
------------------------------------
মাওলানা ওলীউর রহমান : লেখক, প্রাবন্ধিক সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৪৬০৮৭২৬

No comments:

Post a Comment

Pages