ভারত একতরফাভাবে দেশের নদ—নদীর প্রবেশ মূখে বাঁধ নির্মান করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে বারবার মানবিক সংকটে ফেলবে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। ভারতের এসব বৈষম্যমূলক নীতির কারণে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের বিষয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। এমনটি চলতে থাকলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বৈরিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
💟মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
---------------------------------
এবার বর্ষার শুরুতেই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে পরপর তিন দফা প্লাবিত হয় সিলেট নগরী। চরম দূর্ভোগে পড়েন সিলেটবাসী। এসময় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় প্রায় এক কোটি মানুষ সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মানবিক সংকট চলাকালীন আবস্থাতেই দেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, ছাত্র—জনতার আন্দেলন ও স্বৈরাচরী সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে ঠিক তখনই চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতীয় ঢলে ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা—সহ দেশের ১১ জেলায় দেখা দেয় আকস্মিক স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা।
চোখের পলকেই ডুবে যায় অগণিত মানুষের বাড়িঘর, মাছের ঘের, হাস—মুরগির খামার, গ্রামের পর গ্রাম, হাট—বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এতে প্রায় অর্থকোটি মানুষ মানবিক সংকটে পড়েন। এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেলেও ভয়াবহতার যে চিত্র আমরা দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশী হতে পারে। তাৎক্ষনিক সরকারী—বেসরকারীভাবে জরুরী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্যা পরিস্থিতির বিশ্লেষ করে বিজ্ঞানীর বলেন, ‘এতো ঘনো ঘনো বন্যা হওয়া আমাদের এটাই মনে করিয়ে দেয় যে, দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডল এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে।’
বিজ্ঞানীরা বিগত পাঁচ বছরে ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং জর্ডান, চিলি, অষ্ট্রেলিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশের ভয়াবহ বন্যার আঘাত ও বৃষ্টিপাতের ধরণ বিশ্লেষণ করে বলছেন যে, ‘এসব ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর কারণে হয়েছে, যা ক্রমেই আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’
“বায়ূমণ্ডলীয় নদী” বা “উড়ন্ত নদী” হল ভূ—পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে, পরে তারা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য—অক্ষাংশ জুড়ে চলাচল করা মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে। একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে—যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে।
অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তারা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ। নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং প্রায়শই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। যা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে।’ [তথ্যসূত্র— বিবিসি বাংলা অনলাইন]।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণের জন্য শুধুমাত্র জলবায়ূর পরিবর্তনই দায়ী নয়; বরং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়ার পেঁছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। দেশের নদ—নদীর তলদেশে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না থাকা, হাওর—জলাশয় ও চরসমুহে দখল—ভরাট, অপরিকল্পিত উন্নয়ন সাম্প্রতিক বন্যার জন্য কম দায়ী নয়।
তাছাড়া নদ—নদীর প্রবেশ মূখে ভারত কর্তৃক নির্মিত বাঁধ বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বাঁধের কারণে দেশের নদীগুলো নব্যতা হারিয়েছে। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। এমনকি কোন কোন মদী দেখলে মরুভূমির মতো মনে হয়। আর বর্ষাকালে হটাৎই নেমে আসে মহাপ্লাবন।
বর্ষায় ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে দেশের নদ—নদী, হাওর—বাওর, খাল—বিল এমনিতেই পানিতে কাণায় কাণায় ভরপুর থাকে। এমতাবস্থায় আসাম, ত্রিপুরাসহ বাংলাদেশ ঘেষা ভারতের রাজ্যগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পানির লোড বেড়ে গেলেই বাঁধের ‘সুইচগেইট’ খুলে দেওয়া হয়।
এতে দেশের বড় বড় নদী অববাহিকায় আকস্মিক মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েন কোটি কোটি মানুষ। ঘর—বাড়ি, রাস্তাঘাট, হাট—বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষকরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট—সহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
মাঠ—ঘাট সর্বত্র পানি থাকায় পরিবার—পরিজন, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েন দুর্গত এলাকার লোকজন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সাম্পতিক সময়ে এর বহু নজির আমরা দেখেছি।
আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর সাথে এ দেশের মানুষের গভীর মিতালী। ভারত একতরফাভাবে দেশের নদ—নদীর প্রবেশ মূখে বাঁধ নির্মান করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে বারবার মানবিক সংকটে ফেলবে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। ভারতের এসব বৈষম্যমূলক নীতির কারণে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের বিষয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। এমনটি চলতে থাকলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বৈরিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
—————————————————————————————————
মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
Email : hamidsylbd@gmail.com
No comments:
Post a Comment