মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Monday, August 26, 2024

স্বৈরাচারী ব্যবস্থা নির্মূল হোক


এখন প্রয়োজন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার মুলোৎপাঠন। প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি সেক্টরেই প্রয়োজন সংস্কার। নির্মূল করতে হবে দলীয়করণের মাধ্যমে গড়ে উঠা স্বৈরাচারী ব্যবস্থার। পরিবর্তন করতে হবে নিজেকে, নিজের মনোভাবকে এবং গোটা দেশকে। নিজেকে দিয়েই হোক পরিবর্তনের সূচনা।


👉মোঃ আব্দুল বাসিত

👇

শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে। প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। দুটি আন্দোলনই সরকার স্বৈর শাসকের মতো কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ছাত্রদের দুটি আন্দোলনই সফল হয়েছিল। যদি পরবর্তীতে সরকারের হীন মন্যতার কারনে সেই সফলতা হারিয়ে যায়। যা ছাত্র—জনতা তথা নতুন প্রজন্মের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।


নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন থেকেই ছাত্ররা ব্যনার—প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ শুরু করেছিল। ট্রাফিক থেকে শুরু করে পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্র—ছাত্রীদের পদচারনা দেশবাসীর প্রশংসা কুড়ায়। ২০০৯ সালের পর থেকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে নতুন করে ভোটার হওয়া কোন ভোটার ভোট দিতে পারেনি। এই ছাত্রগুলোই কিন্তু এই সময়ের ভিতরেই ভোটার হয়েছে।


যারা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে মার খেয়েছে। সরকারী দলের লেজুরভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির কারণে এরা প্রতিনিয়ত নিপীরিত হয়ে আসছে। যা প্রতিনিয়ত ছাত্র—জনতার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। যার বহিঃপ্রকাশ ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। যা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হয়ে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়।


সমস্যাটা বাধায় সরকার নিজেই। ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করে আবারো আন্দোলনের বীজ বপণ করে দেয়। ছাত্ররা কোটা পুনর্বহাল চলবেনা স্লোগানে রাস্তায় নেমে আসে।

∞ জুলাই—১৪ প্রধানমন্ত্রী চায়না থেকে ফেরত আসার পরেরদিন সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপকালে পুরো কোটা সংস্কার আন্দোলন কে নৈমিত্তিকভাবে নেয়া এমনকি রাজাকারের নাতি পুতি বলে উস্কানি দেয়া। ফলাফল, সেদিন রাতেই ছাত্র—ছাত্রীরা স্লোগান দিতে থাকে তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার ।

∞ জুলাই—১৫ ওবায়দুল কাদের কর্তৃক আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করার জন্য ছাত্রলীগ কে নির্দেশ দেয়া। ফলাফল, সেদিন রাতেই কান ধরিয়ে, মারতে মারতে সাধারণ ছাত্র—ছাত্রী কর্তৃক ছাত্রলীগকে হলগুলো থেকে বের করে দেয়। 

∞ জুলাই—১৭ জাতির সামনে ভাষণ দিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর ইগো ধরে রাখা। ফলাফল, আন্দোলন কমার বদলে উল্টো বেড়ে যায়।  

∞ জুলাই—১৯ পুলিশকে এ্যকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া, তাও আবার পার্টি সেক্রেটারীর মুখ দিয়ে। ফলাফল, তার পরের দিনই অসংখ্য ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় (সঠিক হিসাব এখনো জানা যায়নি)

∞ জুলাই—২০ কারফিউ জারি করে পুলিশ দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ব্লক রেইড দিয়ে ছাত্র পেলেই ধরে নিয়ে যাওয়াঅর্থা’ গণ গ্রেফতার শুরু করা।

∞ জুলাই—২৬ এতো শিশু—কিশোর মারা গেছে, সেদিকে কর্ণপাত না করে বিটিভি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল—এ যেয়ে মায়া কান্না করা। যা সাদারণ মানুষের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগে।

∞ জুলাই—২৯ ডিবি অফিসে সমন্বয়কদের আটকে রেখে জোড় করিয়ে আন্দোলন শেষের স্টেইটমেন্ট দেওয়ানো। যদিও এই ভুলটা বুঝতে পেরে ডিবি হারুণকে সরিয়ে দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়।

∞ তখনও ছাত্রদের যে দাবিগুলো ছিল নিমিষেই তা মেনে নিয়ে সুখে শান্তিতে অন্তত আরো ১০ টা বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। শুধু দরকার হতো ৪/৫ টা মন্ত্রীকে সরানো, হত্যাকান্ডের বিচার ও ভিসিগুলোকে পদত্যাগ করানো.., কিন্তু উল্টো তিনি তার ইগো ইস্যু নিয়েই বসে থাকলেন।

∞ আগস্ট—২ আইন—শৃং্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে বলা।

∞ আগস্ট—৩ দলীয় নেতা—কর্মীদের (ক্যডার বাহিনী) জানিয়ে দেয়া, দেখি আমাকে বাচাওৃ.কি করতে পারো দেখি। সেদিন রাতেই লীগের লোকজনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হোম পেইজ দেখে মনে হচ্ছিল গোটা দেশকেই তারা গিলে ফেলবেন। এবং সেদিন রাতেই অস্ত্র হাতে এলাকায় এলাকায় তাদের নেমে যায়।

∞ আগস্ট—৪ নেতা—কর্মীরা মাঠে ছাত্র—জনতার হাতে নেমে কুকুরের মতো মার খেলেও তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর সময় শেষ। উল্টা সেদিন সন্ধা থেকে কারফিউ এিয়ে নিয়ে আসেন। ফলাফল— উনার সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাত্রদের ১ দিন পরে থাকা লং মার্চ টু ঢাকা ৫ আগস্টের জন্য এগিয়ে নিয়ে আসা। 

∞ আগস্ট—৫ এর গন অভ্যুত্থান ও পরবর্তী কাহিনী গোটা দেশ তথা সারা বিশ্বই জানে। 

এই হাতেগোনা ১০/১২ টি কারনেই সরকারের গদি নড়ে উঠে। নড়ে উঠা এক জিনিস আর পালিয়ে যাওয়া আরেক জিনিস। তিনি কিন্তু তার প্রতি আস্থা রাখা নেতা—কর্মীদের মাঠে নামিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার আনুসারী ও দলীয় নেতা—কর্মীদের চরম হাতাশার মধ্যে ম্যাসাকার অবস্থায় রেখে গেলেন। পুরো বিষয়টি একটি চ্যাপ্টার আকারে ইতিহাস বা সমাজ বিজ্ঞানের বইতে একটা রিসার্চ হওয়া উচিৎ।

যাইহোক, এত্তসব ঘটনাপঞ্জির মধ্য দিয়ে গনতন্ত্রের সাইনবোর্ড লাগিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্টা করা এক স্বৈর শাসকের পতন ঘটে।


এখন প্রয়োজন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার মুলোৎপাঠন। প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি সেক্টরেই প্রয়োজন সংস্কার। নির্মূল করতে হবে দলীয়করণের মাধ্যমে গড়ে উঠা স্বৈরাচারী ব্যবস্থার। পরিবর্তন করতে হবে নিজেকে, নিজের মনোভাবকে এবং গোটা দেশকে। নিজেকে দিয়েই হোক পরিবর্তনের সূচনা।


রাজনীতিতে আসুক যুগান্তকারী সব পরিবর্তন, অন্যায় আর অরাজকতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক নতুন বাংলাদেশে। বন্ধ হোক স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, তদবির সহ যাবতীয় অনাচার, মেধার প্রসার ঘটুক, মেধাই হোক যোগ্যতার মাপকাটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরীভূত করতে হবে দলীয় লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি। ভিন্ন মতকে দমন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। জনভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন সার্ভিসে স্পেশাল টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে; কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। সহনশীলতা, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সকল স্তরের সিন্ডিকেট কঠোর হস্তে দমণ করতে হবে। সকল আইন প্রণয়নে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মীয় বিশ^াসের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে; ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় ভাব—গাম্ভীর্যকে হেয়—প্রতিপন্ন ও কটুক্তি নিরসনে কঠিন আইন জারি করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবসম্মত  ও মানসম্মত উপায়ে সাজাতে হবে; পাঠ্যক্রমে সঠিক ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; সব ধরণের বিকৃত ইতিহাসকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে।


নিত্য—প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধি শক্ত হাতে দমন করতে হবে; বাজার ব্যবস্থার যাবতীয় সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমুল্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। সকল ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকারকে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে; দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হার বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক সেরা কৃষি পণ্যগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্রান্ডে পরিনত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সিন্ডিকেট ও মধ্যসত্বভোগী নির্মূল করে কৃষকদের লভ্যাংশ নিশ্চিত করতে হবে। হজ্জ ও উমরাহ খরচে সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙ্গে দিতে হবে।


পোশাকের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা  নিশ্চিত করতে হবে; স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস কিংবা জীবন নিয়ে কেউ ঝুকি বহন করবেনা। মাদকের জগত থেকে কিশোরদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে; কিশোর গ্যাংয়ের নামে আধুনিক কিশোর সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন, বিষাক্ত স্প্রে দিয়ে পন্য সরবরাহে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে নাগরিকদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি মডেল মসজিদে বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, যোগ্য আলেমদের খতিব হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে এবং দেশের সকল ইমাম—মুয়াজ্জিনদের সরকারি বেতন—ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশীয় জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।


রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে উন্নত দেশগুলোর মতো স্বেচ্চছায়/অত্যাবশ্যকীয়ভাবে পদত্যগ করার চর্চা চালু করতে হবে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি, ঋণ খেলাপি ও সরকারি প্রকল্পে দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সরকারকে কার্যককি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নামে মাত্র নয়, নিশ্চিতভাবেই দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।


নাগরিক সেবায় কোনরকম ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণ করা যাবেনা; দ্রুত, মানসম্মত এবং সম্মানজনক নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে রাস্ট্রকে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে। উন্নত ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে; সরকারি উদ্যোগে স্বাস্ত্যসেবায বিদেশ নির্ভরতা কমাতে হবে। বন্ধ করতে হবে স্বজনপ্রীতি, দখলদারি, টেন্ডারবাজির মতো সকল অনৈতিক কার্যকলাপ। এবং সর্বপরি রাজনৈতিক দলগুলোতে তরুণদের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ।

সর্বোপরি, একটি সুন্দর ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সততা ও নৈতিকতা। নৈতিক নিয়মানুযায়ী কর্তব্য করার প্রবনতা বা বাসনা হচ্ছে সততা। নৈতিকতা একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা একটি কাজ ভাল না মন্দ নির্ধারন করা হয়। ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ ও সিদ্ধান্ত থেকে এর উদ্ভব ঘটায়। কিন্তু নৈতিকতার অভাবেই আজ দেশে এত্তো বিশৃঙ্খলা।


বাতাসে অভিশাপের গন্ধ! পাপের পর পাপ জমা হয়ে আছে। মানবতার জানাজা পড়ায় কখনও হারুন, কখনও পরিমল, কখনও বা ওসমান গনির মতো পাষন্ডরা। আমরা দেখে যাই, আমাদের সয়েও যায়। জমা হয় অভিশাপ। কেউ একশোটা থাপ্পর দিলে নিয়ে নাও, কিন্তু একটি অভিশাপ নিও না। কারণ থাপ্পরগুলো কিছু সময় তোমার শরীরে কষ্ট দেবে, কিন্তু অভিশাপ কেড়ে নেবে ঘুম, কেড়ে নেবে শান্তি। এক বেলা না খেয়ে মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু অশান্তির যন্ত্রণা নিয়ে বেচে থাকা কঠিন।


এই অশান্তির যন্ত্রণা থেকে বাচঁতে হলে মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে হবে। পৃথিবীটা হোক মানুষের, মানুষগুলো হোক পৃথিবীর ব্যসার্ধমতো। অবিকল মানুষের মতো দেখতে মানুষগুলো মানুষ হয়ে উঠুক।


মোঃ আব্দুল বাসিত

পোস্টাল অপারেটর, সিলেট বিভাগ।

ইমেইল: abpostsyl@gmail.com


No comments:

Post a Comment

Pages