মুক্তকন্ঠ - Mukthokonto

স্বাধিন কন্ঠের মুক্ত প্রতিধ্বনি
ব্লগ এডমিন: সেলিম সামীর

Breaking

Thursday, October 17, 2024

মাযার ও ওরস : কিছু কথা

 



‘ওরস’ পালনের কোন ভিত্তি ইসলামি শরীয়তে নেই। রাসূল (সাঃ) এর যুগে বা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)— এর যুগেও ছিল না। ইসলামী শরীয়তে যার ভিত্তি নেই-তা সওয়াবের আশায় করা গোমরাহী।


👉মুহাম্মদ আবদুল হামিদ

=========================

সারা দেশে ওলী—আউলিয়াদের অনেকগুলো মাযার রয়েছে। সকল শ্রেণি—পেশার মানুষ মাযারে জিয়ারত করতে যান। এখানে তারা আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত করেন, দান সদকা করেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এতে কোন অসুবিধা নেই বরং এটা অনেক সোয়াবের কাজও বটে। কিন্তু কেউ যদি এমন ধারণা করেন যে, মাজারে গিয়ে বললেই তার সকল উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে; তাহলে এটা শিরিকের মত জঘণ্য অপরাধ হবে। কারণ, মনের উদ্দেশ্য পূরণের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনি সকল মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। সৃষ্টির অস্তিত্ব ও বিলুপ্তি তাঁরই হাতে। মানুষের জীবন—মৃত্যু, সুস্থতা—অসুস্থতা, সচ্ছলতা—অসচ্ছলতা, উন্নতি—অবনতি, এককথায় সকল কল্যাণ ও অকল্যাণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছু হয়। তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই হয় না। তাঁর কোনো সহযোগী নেই এবং তিনি কোনো উপায়—উপকরণের মুখাপেক্ষী নন। পৃথিবীর সকল বস্তু ও বস্তুগুণ একমাত্র আল্লাহর সৃষ্টি। জীবন ও জীবনোপকরণ তাঁর সৃষ্টি। প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়মকানুন তিনিই সৃষ্টি করেছেন। গোটা জাহান তাঁর মাখলুক এবং সকল মাখলুক তাঁরই আদেশের অধীন।


সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। কোনো মাখলুকের তাতে বিন্দুমাত্র অংশীদারিত্ব নেই। তদ্রুপ উপায়—উপকরণ ছাড়া কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা অন্য কাউকে দান করেননি। অতএব কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো স¤পর্কে এই বিশ্বাস রাখে যে, তিনি কোনো উপায়—উপকরণ ছাড়া অলৌকিকভাবে হাজত পূরণ করতে পারেন, মুসীবত থেকে রক্ষা করতে পারেন, পরিস্থিতিকে অনুকূল বা প্রতিকূল করতে পারেন তাহলে তা হবে পরিষ্কার ‘শিরক’। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে—“তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করিও না।” অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছেÑ“তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব, রাজত্ব একমাত্র তাঁর। আর তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুর বিচির তুচ্ছ আবরণেরও মালিক নয়।” (সূরা ফাতির : ১৩)। 


ধন—সম্পদ, সন্তান—সন্ততি আল্লাহর দান। এসম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছেÑ“আসমান ও যমীনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র—কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশালী।” (সূরা শূরা : ৪৯,৫০)।


অথচ, আমাদের সমাজে কল্পনাপ্রসূত কুসংস্কারে বিশ্বাসী একশ্রেণীর মানুষ শয়তানের ধোকায় মাযারে গিয়ে সিজদা দেয়, সন্তান চায়, মনের মকসুদ উপস্থাপন করাসহ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়। যা ইসলামি শরিয়তে কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলামি শরিয়তে কোন মৃত ব্যক্তিকে তাসাররুফ ক্ষমতার অধিকারী অর্থাৎ গায়বী ক্ষমতা—বলে কার্যস¤পাদনে সক্ষম মনে করা কুফরী।


এছাড়াও মাযারগুলোতে সরলমনা অনেকেই ভন্ডদের দ্বারা প্রতারিত হন। সেদিন দেখলাম একটি পত্রিকায় নিউজ করা হয়েছে, শাহজালাল (রহঃ) মাযারের পার্শে জমজমের পানি বিক্রির নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এরকম প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মাযারগুলোকে কন্দ্রে করে চলছে নানা অপকর্ম ও অসামাজিক কার্যকলাপ। আর ওরস?


‘ওরস’ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ— ‘বাসরযাপন’। কিছু লোকের পরিভাষায়Ñকোন ওলীর—আউলিয়ার মাযারে তার মৃত্যু দিবস পালন উপলক্ষে ভক্তদের সমবেত হওয়া। ‘ওরস’ পালনের কোন ভিত্তি ইসলামি শরীয়তে নেই। রাসূল (সাঃ) এর যুগে বা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)— এর যুগেও ছিল না। ইসলামী শরীয়তে যার ভিত্তি নেই-তা সওয়াবের আশায় করা গোমরাহী। অথচ, সারা দেশে অসংখ্য ওলী—আউলিয়াদের মাযারে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় তথাকথিত “মহাপবিত্র ওরস শরীফ”। নামে পবিত্রতা থাকলেও আড়ালে নোংরামী ও রিপুর চাহিদা—পূরণ, নারী—পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান—বাদ্য এবং মদ—গাঁজার আসর, মাযারকেন্দ্রিক মেলা ওরসের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাছাড়া আধ্যাত্মিকতার নামে আলখেল্লাধারী ভন্ডরা ডোল—তবলা বাজিয়ে নারী—পুরুষ মিলে নেচে—গেয়ে তামাশা করে আর এটাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় বলেও প্রচার করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! শরীয়তের দৃষ্টিতে যেখানে হারামকে হালাল মনে করাই জঘন্য পাপ সেখানে একে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায় মনে করা যে কত জঘন্য পাপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদেশের সচেতন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ওলী—আউলিয়া পীর—মাশায়েখদেরকে সম্মান করেন। তাদের কবর যিয়ারত করেন। তবে তাদের কবর বা মাযারকে কেন্দ্র করে যতসব অপকর্ম দৃষ্টিগোচর হয় তার বিরুদ্ধে কথা বলেন। সচেতন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মাযারে হামলা—ভাঙচুরের পক্ষে নয়; বরং তারা মাযার ও ওরস কেন্দ্রিক অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন। 


ওরস সম্পর্কে আরেকটু ভাবা উচিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হজ্বের স্থানসমূহের সম্মান ও ভক্তির চাইতে মাযারের ভক্তি—শ্রদ্ধাই মাযারপন্থীদের অন্তরে বেশি ও গভীর হয়ে থাকে। মাযারপন্থীরা মাজারের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফর করে। কেউ কেউ সাথে পশু নিয়ে যায় এবং তা কবরবাসীর উদ্দেশ্যে জবাই করে। বিশেষ বিশেষ স্থান ও কবরগুলো তাওয়াফের মত পদক্ষিণ করতে দেখা যায়, এমনকি অনেকে কবরে সিজদাও করে।


হজের সময় ঈমানদারগণ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র কা’বা, আরাফা, মুযদালিফা, মিনা ও হারাম শরীফ ইত্যাদি স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সমবেত হয়ে আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। হাজিরা মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হজের জন্য দীর্ঘপথ সফর করেন। এগুলি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর ইবাদতমাত্রই এক ও অদ্বিতীয় মাবুদ আল্লাহ তাআলার জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালা ব্যাতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদত—বন্দেগী করা শিরক।


ইসলামে কবর  যিয়ারতের বিধান রয়েছে, তবে কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করার সুযোগ নেই। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হল, আখিরাতের স্মরণকে অন্তরে জাগ্রত করা এবং কবরবাসীর জন্য দোয়া করা। হাদীস শরীফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। কারণ তা আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়।” (সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২১২৭)। 


কোনো কবরকে উৎসবের স্থাণ বানানোর সুযোগ ইসলামে নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিয়ো না। বরং আমার প্রতি দরূদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২০৪০)।


👉মুহাম্মদ আবদুল হামিদ

👍সভাপতি : ইসলামী তরুণ সংঘ, শাহপরান (রহ.), সিলেট।


No comments:

Post a Comment

Pages